সরকারি বজ্রমোহন (বিএম) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া রাশেদুল ইসলাম দায়িত্বে রয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। ওই ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ সভাপতি সৈয়দ আলিফ হোসেনও একই পদে কর্মরত। শুধু তারা দুইজনেই নয়; বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শুকুরানা হক, জেলা ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক সুমন খান, ছাত্রলীগ কর্মী মোঃ সজিব, মোঃ উজ্জল, মিলন হাওলাদার, কিশোর কুমার মিস্ত্রী পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডেই। যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে তারা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। বিষয়টি নগর ভবন এবং ওইসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্রমতে, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালীন সময় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে তার অনুসারী কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছেন। ২০১৯ সালের শুরু থেকে মজুরিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব কর্মীদের সিটি করপোরেশনের স্টাফ করে বেতন দেওয়া হতো। ওইসব নেতাকর্মীরা সিটি করপোরেশনে কাজ না করলেও মূলত সাদিক আব্দুল্লাহর আধিপত্য ধরে রাখার জন্য মজুরিভিত্তিতে নিয়োগ নিয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে বেতন পেতেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, সর্বশেষ সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়রের দায়িত্ব ছাড়ার এক মাস আগে ১৮৫ জনকে মজুরিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে, নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পরিষদ যেন চাঁপে থাকে এজন্য এসব নিয়োগ দিয়েছিলেন সাদিক। অপরদিকে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর সাদিকের শেষসময়ে নিয়োগ পাওয়া ১৩৪ জনকে একদিনে (৭ ডিসেম্বর) নিয়োগ বাতিল করেন। এ ছাড়া সাদিকের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া আরও কয়েকশ’ নেতাকর্মীর নিয়োগ বাতিল না করলেও তাদের দায়িত্ব নতুনভাবে বন্টন করা হয়। এতে অনেকেই কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছেন না। রাশেদুল ইসলাম নামের এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহ পর আমাকে পানি শাখার পাম্প অপারেটর পদ থেকে সরিয়ে পরিচ্ছন্নতা শাখায় দিয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সংযুক্ত করেন। আমি সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি। এই কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করার পর মজুরিভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করার যুক্তি নেই। এজন্য কাজে যোগ দেওয়া বাদ দিয়েছি। ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দেওয়া সৈয়দ আলিফ হোসান বলেন, শুরুতে আমাকে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসন শাখায়। এরপর পানি শাখায়। সেখানে নগর ভবনের অফিসে দায়িত্ব পালন করতাম। ওটারও একটা লেভেল ছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাকে পরিচ্ছন্নতা শাখায় স্থানান্তর করে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সংযুক্ত করা হয়েছে। আমি এইচএসসি পাস করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এই পর্যায়ে এসে ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা সম্ভব নয়। তাই কাজে যোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। জেলা ছাত্রলীগের উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক সুমন খান বলেন, ২০১৯ সালে আমি মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। ওইসময় সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অধীনে আমরা যখন ডিউটি করেছি তখন আমাদের একটি মানসম্মত পর্যায়ে ছিলো। মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পেতাম। কিন্তু নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছে পরিচ্ছন্নতা শাখায়। রাস্তায় ময়লা পরিস্কার ও ঝাড়- দেওয়ার কাজ আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমি শিক্ষিত ছেলে হয়ে কেমনে ড্রেন পরিস্কার করবো? তাই আর কাজে যোগ দেইনি। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ক্ষমতাকালের সময়ে তার রাজনৈতিক অনুসারী কতিপয় নামধারী ছাত্রলীগ কর্মীকে মজুরিভিত্তিক চাকরি দেয়া হয় সিটি করপোরেশনে। যাদের মধ্যে আমার ওয়ার্ডের ঝাড়-দারও রয়েছে। শুনেছি ওরা নাকি ছাত্রলীগ পরিচয় দেয়। ওয়ার্ডে অনেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। আবার অনেক ঝাড়-দার কাজে যোগ দিচ্ছেন না। তাদের বিষয়ে সিটি করপোরেশন বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান রোমেল বলেন, মজুরিভিত্তিক বিভিন্ন স্তরে নিয়োগপ্রাপ্তরা বেতন পান। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অনেকে মাসে ১০ হাজার আবার অনেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পান। এই টাকা তার হাজিরার ওপর নির্ভর করে। মজুরিভিত্তিক শ্রমিক অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি জানান, যারা অনুপস্থিত রয়েছেন তাদের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।