শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় যোগানিয়া ইউনিয়নের এক খালের পাড় থেকে শাহ কামাল (৩৮) নামের এক দিন মজুরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে ভাইটকামারী গ্রামের লিলু খালের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত শাহ কামাল উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের ভাইটকামারী গ্রামের মৃত জুবেদ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় দিন মজুর। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহ কামালের মামা সাবেক যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ ৬জনকে থানায় নিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের চালঞ্চল্যকর তথ্য পায়। পূর্বের খুনের ঘটনা অন্য দিকে প্রবাহিত করতেই নিজ ভাগিনা কে খুন করার পরিকল্পনা করা হয় বলে পুলিশ জানতে পারে। পুলিশ এক দিনের মধ্যেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে শনিবার ২৭ জানুয়ারী বিকেলে নালিতাবাড়ী থানায় সাংবাদিকদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি পরিস্কার করে। পুলিশ ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শাহ কামাল রাতের খাবার খেয়ে বাজার এলাকায় চা খেতে বের হন। পরে গভীর রাতেও বাড়ি না ফেরায় তাঁর স্ত্রী শেফালি বেগম (৩২) প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে শাহ কামালের খোঁজ করে পাননি। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এক যুবক ভাইটকামারী লিলুখালের পাড়ে তাঁর গলাকাটা লাশ দেখতে পান। পরে জরুরী সেবা ৯৯৯ -এ খবর দিলে নালিতাবাড়ী থানা -পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহ কামালের লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশের সুরাতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এদিকে খবর পেয়ে শেরপুরের পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগমসহ পুলিশের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও হত্যা রহস্য উন্মোচনে সিআইডিসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগ কাজ করেন একই সাথে পুলিশ ঘটনা স্থল হতে আলামত রক্তমাখা ছুড়ি, কাপড় ও অন্যনা জিনিস উদ্ধার করে। অন্যদিকে, হত্যাকান্ডের তদন্তকালে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বসতঘর তল্লাসী করে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুড়ি, জামা-কাপড় ও জুতা জব্দ করে পুলিশ। এ সময় পরিকল্পনাকারী হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তার ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), তৃতীয় স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা (৪২), সহোদর ভাই হারেজ আলী (৫৮), ভাতিজা মোস্তফফা (৩০) ও রাহুলকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। রাতেই হত্যাকান্ডের শিকার শাহ কামালের মা অছিরন বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রামবাসী সূত্রে জানায়, ২০১৮ সালে ভাইটকামারী গ্রামের ফজল মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাগনে শাহ কামাল ৫৫ শতক জমি বর্গা নেন। পরে ২০১৯ সালে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ফজল মিয়ার পরিবারের ঝগড়া বাধে। তখন হাবিবুর রহমানের গুলিতে ফজল মিয়ার ছেলে ইদ্রিস আলীর হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় হাবিবুর, তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও ভাতিজাসহ কয়েজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। তাঁদের সবাই এখন জামিনে রয়েছেন। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফজল মিয়া সেই জমি বুঝিয়ে দেননি শাহ কামালকে। ৭০ হাজার টাকাও দেননি। এ নিয়ে শাহ কামাল বর্গা নেওয়া জমির টাকা ফেরত পেতে একাধিক সালিস করেও কোনো সুরাহা পাননি। নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া জানান, আমরা লাশ উদ্ধারের পর হতেই নানা দিক থেকে তথ্য পেয়ে নিহতের মামা হবি ও তার পরিবারের দিকে দিকে সন্দেহ হচ্ছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের মামা ও পরিবার কে স্বপরিবারে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকারুক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার নালিতাবাড়ী সার্কেল দিদারুল ইসলাম বলেন, এই খুনের ঘটনা ঘটনার পর হতেই তথ্য উপাত্তে আমাদের সন্দেহটা ওর মামা ও পরিবারের দিকেই যাচ্ছিল। এরপর জিজ্ঞসাবাদে সব রহস্য বেরিয়ে আসে।