ফুটবলের ডাগআউটে ইয়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে পেপ গুয়ার্দিওলার প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা দারুণ রোমাঞ্চকর এবং বেশ পুরনোও। এক দশকের বেশি সময়ে প্রতিযোগিতার মঞ্চ পাল্টেছে, কিন্তু শিরোপা লড়াইয়ে তারা আছেন সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েই। তাই ক্লপের হঠাৎ লিভারপুল ছাড়ার খবরে গুয়ার্দিওলার মধ্যে কিছুটা মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে। আচমকাই শুক্রবার এক বিবৃতিতে চলতি মৌসুম শেষে লিভারপুল ছাড়ার ঘোষণা দেন জার্মান কোচ ক্লপ। খুব স্বাভাবিকভাবেই দিনভর যা ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। পরে রাতে এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে সিটির ১-০ গোলে জয়ের পর গুয়ার্দিওলাকে প্রশ্ন করা হয়, ক্লপের সিদ্ধান্ত তাকে অবাক করেছে কিনা। উত্তরে গুয়ার্দিওলা বলেন, “কিছুটা তো বটেই”। “তিনি সত্যিই অবিশ্বাস্য এক কোচ। এটা ঠিক যে, তাকে আমি খুব কাছ থেকে জানি না, তবে তিনি অসাধারণ একজন মানুষ। (খবরটা শুনে) আমার মনে হচ্ছিল যেন তিনি ম্যানচেস্টার সিটিতেও আমাদের ছেড়ে যাচ্ছেন, কেননা অনেক বছর ধরে লিভারপুল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।” “যখন তিনি ডর্টমুন্ডে ছিলেন এবং আমি বায়ার্নে ছিলাম, সেই থেকে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। তার অভাববোধ হবে, ব্যক্তিগতভাবে আমি মিস করব তাকে। অবশ্য আমি কিছুটা খুশিও, কারণ এখন থেকে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে একটু ভালোভাবে ঘুমাতে পারব। তাকে শুভকামনা জানাই।” বার্সেলোনা অধ্যায় শেষে ২০১৩ সালে বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেন গুয়ার্দিওলা। আর ডর্টমুন্ডে আগে থেকেই ছিলেন ক্লপ। এরপর ২০১৫ সালে লিভারপুলে যোগ দেন ক্লপ। পরের বছর বায়ার্ন ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নেন গুয়ার্দিওলা। সময়ের সেরা দুই কোচের লড়াই আবারও জমে ওঠে। গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে গত কয়েক বছরে নিশ্চিতভাবেই ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে ম্যানচেস্টার সিটি। দলটির ধারাবাহিক শিরোপা সাফল্যই তার প্রমাণ। এই সময়ে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ক্লপের লিভারপুল। দল দুটির ম্যাচের আগে ক্লপণ্ডগুয়ার্দিওলার কৌশলের লড়াই নিয়েও আলোচনা হতো বেশ। গত ছয় বছরে পাঁচবারই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে সিটি। মাঝে ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩০ বছরের শূন্যতা ঘুঁচিয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় লিভারপুল। ২০২১-২২ প্রিমিয়ার লিগেও শিরোপা জয়ের জোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তারা। একেবারে শেষ দিনে তাদেরকে ১ পয়েন্টে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয় সিটি। সিটিকে টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা জেতানোর মিশনে থাকা গুয়ার্দিওলার বিশ্বাস, সামনে হয়তো আবারও ফিরে আসবেন ক্লপ। নিজের বার্সেলোনা অধ্যায়ের অভিজ্ঞতাও স্মরণ করলেন তিনি। “তিনি স্বীকার করবেন না, কিন্তু তিনি ফিরে আসবেন। সব কোচই (এক ক্লাবে) অনেক বছর কাজ করার পর ক্লান্ত বোধ করে, আমারও সেই অনুভূতি হয়েছিল।” “বার্সেলোনায় আমার ঠিক এমনটাই হয়েছিল, তাই আমি (ক্লপের বিষয়টা) বুঝতে পারছি।” দীর্ঘ তিন দশকের প্রতীক্ষার পর ক্লপের কোচিংয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগের বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে লিভারপুল। ক্লপের হাত ধরে ক্লাবটি আরও জিতেছে ক্লাব বিশ্বকাপ, লিগ কাপ, এফএ কাপ, সুপার কাপ। এক কথায় বললে, অ্যানফিল্ডে শীর্ষ পর্যায়ের সব শিরোপাই জিতেছেন ক্লপ। সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা বিবৃতিতে ক্লপ উল্লেখ করেছেন, এখানে তার দম ফুরিয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে তার। গুয়ার্দিওলাও ঠিক এই কথাটাই বলেছেন। এই স্প্যানিয়ার্ড আরও বলেন, প্রিমিয়ার লিগে ক্লপের শূন্যতা বোধ হবে। “আমার মনে হয়, পুরো প্রিমিয়ার লিগেই তার জাদুকরী ছোঁয়া, তার ব্যক্তিত্ব এবং তার দল এতদিন যেভাবে খেলেছে, সবকিছুর অভাব বোধ হবে।”