কৃষিজমির মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। ফলে উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে ফসলি জমি। কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। যেখানে মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে ঘরবাড়ি, শিল্পণ্ডকারখানা, রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ নানা প্রয়োজনে জমির চাহিদা। সেখানে ক্রমাগতভাবে কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। অথচ বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন আরো বেশি কৃষিজমি, আরো বেশি ফসল উৎপাদন। কিন্তু আমরা সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিত পদক্ষেপে প্রয়োজন অনুযায়ী এগোতে পারছি না। কেননা এর বহুবিধ কারণ ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর এর একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ইটভাটা। কৃষিজমির ওপরের দু-তিন ফুট মাটিই উর্বর। এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে অণুজীব থাকে। এরা মাটির উর্বরতা বাড়ায়। ইটভাটাগুলো ফসলি জমির ওপরের স্তরের মাটি কেটে নিয়ে যায়। এরপর সে জমিতে ফসল হয় না বললেই চলে। অথচ এই ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া বন্ধের কোনো উদ্যোগও নেই আমাদের দেশে। উত্তোলিত মাটি অর্ধশতাধিক ট্রাক্টর-মাহিন্দ্রা দিয়ে পাঁচার করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ট্রাক্টর-মাহিন্দ্রার চলাচলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা গুলোর সড়ক। পাশাপাশি ধুলাবালির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশপাশের জনজীবন। এভাবে প্রকাশ্যে মাটি কেটে বিক্রির হিড়িক চললেও রহস্যজনক কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়াও জানা গেছে, ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে বাড়তি কিছু অর্থ পাওয়ার জন্য ফসলি জমি থেকে দেদার মাটি বিক্রি করছে এক শ্রেণির কৃষক। কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজেদের ইটভাটার জন্য মাটি নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটার মালিকরা। মাটি কেনাবেচায় আপাত লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়ছে জমির উর্বরতা শক্তি। এ ছাড়া মাটি কেটে নেওয়ার ফলে জমি নিচু হয়ে পড়ায় চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফসলি জমি কেটে পুকুর করার প্রতিযোগিতা। ধীরে ধীরে সেচ প্রকল্পের ভেতরে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীদের সংঘবদ্ধ চক্র কৃষকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে এক্সকাভেটর বা ভেকু মেশিন দিয়ে কৃষিজমির মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করছে। কৃষকরা তাদের কাছে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই কোনো অবস্থাতেই ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা যাবে না এবং যারা অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে বা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ আমরা চাই, কৃষিজমির মাটি কাটা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি নেবে সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে ও প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। যে করেই হোক আমাদের দেশের কৃষি জমিগুলো রক্ষা করতেই হবে।