বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক বছর আগের জরিপের হিসাব অনুযায়ী আমাদের দেশের শতকরা ২৮ ভাগ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে কম। মাত্র তিন ভাগ। তবে শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকায় এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর মোট জনসংখ্যার হিসাবে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ লোক ভাড়াবাসায় থাকেন। কোনো বিকল্প না থাকায় এটাই একমাত্র উপায় তাদের জন্য। কিন্তু বাস্তবতার প্রয়োজনে নানা বিড়ম্বনাকে সঙ্গী করে ভাড়া বাসায় থকছে মানুষ। কিন্তু এই বাসা ভাড়ায় রয়েছে কিছু বিড়ম্বনা। এই বিড়ম্বনার মধ্যে রয়েছে বছর না ঘুরতেই বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া, বাড়ির মালিকের ইচ্ছে অনুযায়ী ভাড়াটিয়াকে বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা, ভাড়া নেওয়ার সময় করা চুক্তির শর্ত না মানাসহ আছে নানা হয়রানি। অথচ ভাড়াটিয়াদের অজ্ঞতাকে এ ক্ষেত্রে খানিক দায়ী করা যেতে পারে। কারণ তারা অবগত নন, ‘বাড়ি ভাড়া দেওয়া এবং নেওয়া সংক্রান্ত একটি আইন আছে দেশে। এমনকি বাড়িওয়ালারা হয় ওয়াকিবহাল নয়, না হয় থোড়াই কেয়ার করেন। ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষায় ১৯৯১ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করে সরকার। তবে সেই আইন কোন মন্ত্রণালয় বা কোন সংস্থা দেখভাল করবে সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এই আইনে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু বিষয় রয়েছে বাড়িভাড়া দেওয়া এবং নেওয়ার ক্ষেত্রে। যেমন-আইন অনুযায়ী বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিনামা থাকতে হবে। যেখানে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে। আর সেই লিখিত চুক্তিতে উল্লেখ থাকবে-চুক্তিনামায় ভাড়ার মেয়াদ, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিলসহ অন্যান্য আরো নানা প্রয়োজনীয় বিষয়। এবং এখানে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ও গ্যাস বিল কে পরিশোধ করবে। এ ছাড়া বাড়ির অবস্থান ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে কত জামানত হবে সেটাও এই লিখিত চুক্তিনামায় উল্লেখ থাকতে হবে। আইন অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক মানসম্মত বাড়িভাড়া নির্ধারণ হওয়ার কথা। এতে প্রতি বছর কত টাকা বাড়ানো যাবে, অথবা বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সুযোগসুবিধা কী তা নিয়েও থাকবে একটি নির্দেশনা। কিন্তু এ নিয়ে একটি আইন হলেও সেটির কোনো বাস্তবায়ন নেই। তবে বর্তমানে সরকারের আইনটি যুগোপযোগী করা দরকার। বাড়িভাড়ার এই বাবা-মাহীন অবস্থা ঘোচানো হাজার হাজার পরিবারের জন্য অতি জরুরী। এজন্য প্রয়োজন বাড়ি ভাড়া আইন পুরোপুরি কার্যকর করার কর্তৃপক্ষীয় ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে নতুন আইন করা।