বড় ক্লাব, বড় দায়িত্ব, তার চাপটাও যে ভীষণ, তা ফুটে উঠল শাভি এর্নান্দেসের কণ্ঠে। মৌসুমের মাঝপথে এসে হঠাৎ করেই বার্সেলোনার কোচের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বললেন, প্রাণশক্তি ফুরিয়ে আসছিল! ভিয়ারেয়ালের বিপক্ষে ৫-৩ গোলের হারের পর প্রতিক্রিয়া দিতে এসে শান্ত কণ্ঠেই শাভি বলেছেন, আগামী জুনে বার্সেলোনার কোচের পদ ছাড়বেন। কিন্তু তাতেই অশান্ত চারদিক। হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? কোচিং ক্যারিয়ারে খুব বেশি অভিজ্ঞতা ছিল না শাভির। কাতারের ক্লাব আল সাদের কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বছর দুয়েক। কিন্তু ২০২১ সালে সাবেক এই মিডফিল্ডারের কাঁধেই বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেওয়ার ভার তুলে দিয়েছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। রোনাল্ড কোমানের স্থলাভিষীক্ত হন শাভি। ২০২১-২২ মৌসুম ভালো কাটেনি শাভির। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া বার্সেলোনা পায়নি কোনো শিরোপার স্বাদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকেও কাতালুনিয়ার দলটি ছিটকে যায় গ্রুপ পর্ব থেকে। তুলনামূলকভাবে ২০২২-২৩ মৌসুম ছিল শাভির জন্য স্বস্তির। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রেয়াল মাদ্রিদকে ৩-১ গোলে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছিল বার্সেলোনা। লা লিগার মুকুটও ফিরে পেয়েছিল তারা। অস্বস্তির কাটা হয়ে ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ইউরোপ সেরার আসরে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ দল; আবারও বার্সেলোনা বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে! তারপরও শাভির কাঁধেই আস্থার হাত রাখে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে বার্সেলোনা ছিল না চেনা ছন্দে। স্প্যানিশ সুপার কাপে রেয়ালের কাছে হেরে মুকুট হারিয়েছিল শাভির দল। কোপা দেল রের থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজল কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে। যে ক্লাবের জার্সিতে খেলোয়াড় হিসেবে মুঠো ভরে পেয়েছিলেন, কোচের দায়িত্বে এসে চাপটা অনুভূত হতে লাগল, ভেতরে ভেতরে ফুরিয়ে যেতে থাকলেন শাভিও। ভিয়ারেয়াল ম্যাচ হয়ে এলো চরম ধাক্কা হয়ে। জয়ের পথে থাকা দল হেরে গেল দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দুই গোল হজম করে। তাতে লা লিগার মুকুট ধরে রাখার সম্ভাবনা পড়ে গেল গভীর শঙ্কায়। লিগ টেবিলে এ মুহূর্তে ২১ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রেয়াল। দুই পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে মৌসুমে একের পর এক চমক দেখানো জিরোনা। রেয়ালের চেয়ে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে বার্সেলোনা। লিগ শিরোপা বলতে গেলে তাদের জন্য অনেক দূরের বাতিঘর। যদিও শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন শাভি, কিন্তু বার্সেলোনার দ্বায়িত্বের পাহাড়সম চাপে যে ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন, জানিয়েছেন সে কথাও। “বার্সেলোনায় আপনি সবসময় অনুভব করবেন, আপনাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, আপনি অবমূল্যায়িত হচ্ছেন-এভাবেই ক্লাব তার কাজ করে। মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে, এটা কঠিনও। আমি ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ, কিন্তু প্রাণশক্তি ফুরিয়ে আসছেৃএবং কিছু দৃষ্টিকোণ থেকে আমার উপলব্ধি থেকে যাওয়ার কোনো মানে নেই।” দুঃসময়ের মধ্যেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অবশ্য ভালো অবস্থানে আছে বার্সেলোনা। গ্রুপ সেরা হয়ে নকআউট পর্বে উঠে এসেছে তারা। আগামী মাসে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে সেরি আর দল নাপোলির মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা। কিন্তু ইউরোপ সেরার মুকুট ফিরে পেলেও সিদ্ধান্তের বদল হবে না বলেও জানালেন শাভি। “যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিও, তাহলেও সিদ্ধান্ত বদল করব না আমি। সোমবার এই সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের বলব। আমি সবচেয়ে দায়িত্বশীলৃ অবশেষে ছেলেরা এখন মুক্ত।”