মানুষ, পশুপাখিসহ সৃষ্টিকুলের সবাই বসবাস ও ঘোরাঘুরির উপযুক্ত পরিবেশ খোঁজে বসবাস ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল। অপরূপ সৌন্দর্যকে কে না উপভোগ করতে চায় সবাই। নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধতা ছড়ায়,বিচ্ছিন্ন হৃদয় জোড়া লাগে এবং পাথর হৃদয়েও ঘর বাঁধে মনের একমাত্র ভালোবাসা। তেমনি কালীগঞ্জ ঝিনাইদহে তেতুলতলা নলডাঙ্গা সড়কে। প্রতিদিন বিকালে জমে উঠে নারী পুরুষদের মিলন মেলায়, শিশুরা ও অত্যান্ত বিনোদন উপেভোগ করে।
এ সড়কটি আলোচনায় এসেছে সারি সারি নারিকেল গাছ অপুর্ব সোন্দর্যের কারণে। কিন্তু ঝিনাইদহে তো সড়ক কতই আছে, সেখানে তো কেউ পরিবার-পরিজন বা প্রেমিক প্রেমিকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে যান না। নলডাঙ্গা সড়কের সবুজ নারিকেল গাছ প্রশস্ত রাস্তাটিকে সবার মনে আকৃষ্ট করে তুলেছে। সড়কের দু,পাশে নারিকেল গাছের সারি সারি সবুজে ঘেরা মনোরম বাগানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে ঝুলছে নারিকেল ও ডাবের থোকা।
সারি সারি নারিকেল গাছ, চারধার সবুজ। প্রকৃতিক প্রেমিক মাত্রই এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হবেন। প্রতিদিন ঘুরতে আসেন বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ বসছে নানা ধরনের খেলনা ও খাবারের দোকান। এই সড়কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির মহানায়ক হলেন নলডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত ছবেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আলাউদ্দীন। তার হাতের ছোঁয়ায় তেঁতুলতলা থেকে নলডাঙ্গা সড়কটি আজ মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন ১৯৫১ সালে জন্ম গ্রহন করেন এক সম্ভান্ত পরিবারে,তার পিতাও ছিলেন চেয়ারম্যান। ১৯৯২ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আলাউদ্দীন পরের বছর ১৯৯৩ সালে নলডাঙ্গা সড়কে ২৫০০ টি নারিকেল গাছ রোপন করেন। পরিচর্চা ও যতেœর পর বর্তমানে মাত্র ৭০০ নারিকেল গাছ বেঁচে ছিল। প্রায় ৩৩ বছর পর সৌন্দর্য্য মানুষের নজরকাড়ে নারিকেলের সারি সমৃদ্ধ ছায়াঘেরা সড়কটি।
আলাউদ্দীন জানান, ১৯৯২ ও ২০১২ পর্যন্ত তিনি ১৪ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চেয়ারম্যান না হলেও ২০২২ সালে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪ কিলোমিটার জুড়ে তালের বীজ বপন করেন। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও স্কুল উন্নয়নে তার অবদান রয়েছে। এলাকায় করেছেন ব্রীজ, কালভার্ট ও বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক। প্রতিদিন বিকাল হলেই ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ গ্রামীন পরিবেশকে উপভোগ্য করে তুলতে ছুটে যান।
মাঠের বুক চিরে পিচ ঢালা এই সিমসাম পরিষ্কার রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ যাত্রাপথে পথিকদের সহ ভ্রমণপিপাসু অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে এই মনোরম পরিবেশে। বর্তমানে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন পতিটি গাছে চুনের প্রলেপ দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।
এ সৌন্দর্য কে ধারে রাখতে সার্বিক পরিচালনা ও পরিদর্শন করে থাকেন চেয়ারম্যান নিজেই।মানুষ তার অবসর সময়ে মটর সাইকেল, প্রাইভেট,ইজিবাইক,বাইসাইকেল চেপে পরিবার পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে এ সড়কে ঘুরতে আসেন। সবুজের বুক চিরে পিচঢালা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে নারিকেল গাছ গুলো। মানুষের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটির দুই পাশ দিয়ে রোপণ করা হয় অসংখ্য নারিকেল গাছ। প্রতিটি গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে, সৃষ্টি করেছে অপরূপ সৌন্দর্য। কর্মব্যস্তার মাঝে অনেকে কিছুটা প্রশান্তির জন্যে ছুটে আসেন এই সড়কে।
অনেকে বার্ষিক উৎসব গুলোতে সড়কে ঢল নামে মানুষের। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন হতে এখনও সড়কটিতে মানুষের ভিড়। আঁকাবাঁকা হয়ে সড়কটি কালীগঞ্জ শহর থেকে নলডাঙ্গা বাজার হয়ে তেতুলতলা বাজারে মিশে গেছে। সারিবদ্ধ নারিকেল গাছের কারণে সড়কটির পরিচিতি এখন গন্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানালেন ঘুরতে আসা নানা বয়সের মানুষ।পড়ন্ত বিকেলে গোটা সড়কটি অনেকে বাড়ির ছোট্ট শিশুটিকে কোলে নিয়ে ফাঁকা মাঠের মাঝে মনোরম এই পরিবেশে এসেছেন ঘুরতে।
অনেকে এসেছেন বন্ধু বা পরিবার পরিজন নিয়ে।কবির হোসেন বলেন, লোকমুখে শুনে এই স্থানটিতে ঘুরতে এসেছি। অসাধারণ ভালো লাগছে, আমি মুগ্ধ। পাশেই সোনালী ধানের মাঠ। অপরূপ এক সৌন্দর্য।এই সড়কের ফাঁকা স্থানে মাঠের মধ্যে নারিকেল গাছ রোপণের কারণে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিটি মানুষ আনন্দ যোগাতে পারে এ নারিকেল বাগানে। এটিকে মানসম্মত পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হলে এখান থেকেও কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাবে সরকার।