শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কোন অনুমতি ছাড়াই সুন্দরবন ভ্রমন বিলাসে গেলেন কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ জন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে ভুড়ি ভোজের আয়োজন করতে। রোববার বিকাল পর্ষন্ত ওই শিক্ষকরা ফিরে না আসায় একাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল। রোববার সন্ধ্যায় তারা ফিরে আসেন কালীগঞ্জে। বৃহস্পতিবার বেলা ১ টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান সহ ওই শিক্ষকরা ৪ দিনের সুন্দরবন ভ্রমন বিলাসে যান। সুন্দরবনে গিয়ে সেখানে প্রায় ৪ দিন চালিয়েছে ভুড়ি ভোজের আয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলছেন এতগুলো শিক্ষক ছুটি না নিয়ে তার সাথে ভ্রমন্বনে গেছেন তিনি জানেনা এমন কথাটি কিভাবে বললেন সেটি সচেতন অভিভাবদের প্রশ্ন।
যাওয়ার দিন অনেক শিক্ষক ঠিকমতো স্কুল করেননি ছুটিও নেননি। ভ্রমন বিলাসের জন্য শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটির অনুমতি নিয়েছেন বলে জানালেও অধিকাংশ শিক্ষকই ছুটি নিয়ে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে স্কুল খোলা রেখেই শিক্ষকরা ভ্রমন বিলাসে যাওয়ায় ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জানতে রোববার সরেজমিনে উপজেলার মহাদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষক ভ্রমন বিলাসে গেছেন। এ সময় প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা আসিমা বিশ্বাস জানান, তাদের বিদ্যালয়ে মোট ৫ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে ৩ জন শিক্ষক সুন্দরবন পিকনিকে গেছেন। একারনে বিদ্যালয়টির ক্লাস নেওয়া সমস্যার কথা স্বীকার করলেও তারা দু’জকে প্রতিটি ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান। বিদ্যালয়ের মুভমেন্ট খাতায় প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষকের ছুটি নিয়ে ভ্রমন বা পিকনিকে গেছেন এমন কোন কিছুই লেখা দেখা যায়নি,জমা দেননি ছুটির আবেদনের কোন দরখাসত।
বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অর্চনা বিশ্বাস জানান, প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষকের ছুটির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না, নিজেদের ইচ্ছামত তারা পিকনিকে গেছেন। রোববার পর্যন্ত ফিরে না আসালে বিষয়টি তিনি এটিওকে অবহিত করেছেন। উল্লেখ্য, অপর এক সুত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ রতনের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে ফারহানা নামে শিশু শ্রেনীর এক শিশু শিক্ষার্থীর দুই কলির চুল টেনে ছিড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। ব্যাগ থেকে বই বের করতে দেরি করায় ক্লাসের মধ্যেই ওই অমানবিক কান্ড ঘটিয়েছিল শিক্ষক রতন।
এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু তারপরও ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে নিয়ে ভ্রমন বিলাসে গেলেন শিক্ষা কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেলাট দৌলৎপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন ও দূর্গাপুর বিদ্যালয় সহ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ওই ভ্রমন বিলাসে যাওয়া শিক্ষকদের অধিকাংশই ছুটি না নিয়ে কাগজে ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান বলেন, বিদ্যালয় খোলা থাকলে একসাথে একাধিক শিক্ষকের ছুটি বা ভ্রমনে যাওয়া অপরাধ। এক বিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষক ভ্রমনে যাচ্ছেন এমন বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে, বৈধভাবে ছুটি না নিয়ে ভ্রমনে যাওয়া শিক্ষকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ মোহন কিশোর সাহা বলেন, একই সময়ে এক বিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষক ভ্রমনে যাওয়া আইন সন্মত নহে। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।