সরকারি বিধি নিষেধকে উপেক্ষা করে জেলার গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গড়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দালাল নির্ভর এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
অভিযোগ রয়েছে, রহস্যজনক কারণে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা। জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পেতে প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ জনবল, যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি ১০ বেডের একটি ক্লিনিকের অনুমোদনের ক্ষেত্রে শুধু রোগীর ওয়ার্ডের জন্য প্রতি বেডে ৮০ বর্গফুট করে মোট ৮০০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। একইসাথে অস্ত্রোপাঁচার রুম, পোস্ট অপারেটিভ রুম, ওয়াশ রুম, ইনস্ট্রুমেন্ট রুম, লেবার রুম, ডক্টরস ডিউটি রুম, নার্সেস ডিউটি রুম, অপেক্ষমাণ রুম, অভ্যর্থনাকক্ষ, অফিস রুম, চেইনঞ্জিং রুম, স্টেরিলাইজার রুমসহ সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তত ১৩টি রুম থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রশস্ত সিঁড়ি, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (ভবন তিনতলার অধিক হলে) লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অপারেশন রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, টেবিল, পর্যাপ্ত লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন, জরুরি ওষুধ সমূহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন, আইপিএসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
তৃতীয়ত সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য, জীবাণুযুক্ত বর্জ্য, তরল বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকা অত্যাবশ্যকীয়। জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তিন জন ডিউটি ডাক্তার, ছয় জন ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে সার্বক্ষণিক। কিন্তু এসবের কোনো নিয়মই মানছে না গৌরনদী উপজেলার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা। সরকারি হাসপাতালের এক কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই ১০ থেকে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক রয়েছে।
এছাড়া গৌরনদী বন্দর রোড, টিএন্ডটি মোড়, বাটাজোর বন্দর, বাকাই বাজার, হোসনাবাদ লঞ্চঘাট ও সরিকল বন্দর এলাকায় ছোট বড় প্রায় ৪০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। আর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের প্রাচীর ঘেঁষেই ৮ থেকে ১০টির মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় ভৌত (কক্ষ) সুবিধা ও প্যাথলজিক্যাল পরিবেশ নেই। অধিকাংশ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ডিউটি ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবল এবং ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি বিধান না মেনেই বাসা-বাড়িতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। অনুমোদনের যেসব বৈশিষ্ট্য পূরণ করতে হয় তার কোন বালাই নেই। এরমধ্যে অনেকে অনুমোদন পেয়েছে, আবার নিয়ম না মেনে আবেদন করে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রায় প্রত্যেকটি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সাথে স্ব স্ব এলাকার ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা জড়িত রয়েছেন। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে ওইসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছেন না।
গৌরনদী উপজেলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল ওহাব শিকদার বলেন, উপজেলায় বেসরকারি ১৬টি হাসপাতাল ও ১৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। সরকারি বিধিমোতাবেক যেসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র সঠিক আছে তাদেরকেই আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি নিয়ম নীতি অনুযায়ী ঢাকার পপুলার হাসপাতালও চলতে পারে না। সেখানে উপজেলা পর্যায়ে সম্পূর্ণ সঠিকভাবে চলা সম্ভব না।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান জানান, রেজিস্ট্রেশন ও নবায়নবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। নরপোটিক্স লাইসেন্স, টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, পোস্ট অপারেটিভ রুম না থাকায় ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে গৌরনদী গ্রিন লাইফ হসপিটালকে ২০ হাজার টাকা ও বাটাজোর নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ডক্টরস চেম্বারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুমোদন ছাড়া যেগুলো রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।