আগের ম্যাচে অসাধারণ অলরাউন্ড পারফর্ম করা কার্টিস ক্যাম্পার এবার একাদশেও নেই। কিন্তু কোনো ঘাটতিই বোঝা গেল না। তার বদলে একাদশে এসে বিপিএল অভিষেকে ম্যাচ জেতানো ফিফটি করলেন টম ব্রুস। রানের দেখা পেলেন তানজিদ হাসানও। বিলাল খানের সুইং বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীর পর এই দুজনের ফিফটিতে বড় জয় পেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয়ের স্বাদ পেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সব মিলিয়ে আসরের পাঁচ ম্যাচে তাদের জয় চারটি। গতবার চমক দেখানো সিলেট এবার হারল চার ম্যাচের সবকটিই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সোমবার ২০ ওভারে স্রফে ৪ উইকেট হারালেও সিলেট রান করতে পারে কেবল ১৩৭। উইকেট কিছুটা মন্থর হলেও ভয়ঙ্কর কিছু ছিল না। চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলার মতো কিছু করতে পারেনি সিলেটের বোলাররা। ম্যাচ জিতে যায় তারা ১৪ বল বাকি রেখেই। ওপেনিংয়ে তানজিদের ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৫০। নিউ জিল্যান্ডের কিপার-ব্যাটসম্যান টম ব্রুস বিপিএলে প্রথমবার খেলতে নেমে অপরাজিত থাকেন ৪৪ বলে ৫১ রানে। তবে নতুন বলে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচের সেরা বিলাল খান। ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন ওমানের বাঁহাতি পেসার। অন্য বোলাররাও বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। সিলেটকে অল্প রানে আটকে চট্টগ্রামের জয়ের ভিত গড়ে দেন তারাই। চট্টগ্রামের রান তাড়া শুরুতেই গতি পায় আভিশকা ফার্নান্দোর ব্যাটে। দ্বিতীয় ওভারে হ্যারি টেক্টরকে তিনবার বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি। আগের ম্যাচে ৯১ রানের ইনিংস খেলা লঙ্কান ব্যাটসম্যান অবশ্য এবার টিকতে পারেননি লম্বা সময়। ১২ বলে ১৭ করে তিনি সীমানায় ধরা পড়েন তানজিম হাসানের বলে। তবে চট্টগ্রামের রানের ধারা ছুটতেই থাকে। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তানজিমকে ছক্কা ও চার মারেন টম ব্রুস। পাওয়ার প্লেতে রান ওঠে ৪৭। শুরুতে জড়তা থাকলেও তানজিদ সময়ের সঙ্গে ছন্দ পেয়ে যান। লেগ স্পিনার দুশান হেমান্থাকে ছক্কায় স্বাগত জানান তিনি। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে মারেন ছক্কা-চার। এই জুটির পঞ্চাশ আসে ৩১ বলে। তবে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরই টেক্টরের সোজা বলে কাট করার চেষ্টায় অফ স্টাম্প হারান তানজিদ। চট্টগ্রামের জয় তখন অনেকটাই নিশ্চিত। ব্রুস ও শাহাদাত হোসেন সেই পথটুকু পাড়ি দেন অনায়াসেই। ম্যাচের প্রথম ভাগে সিলেট ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। টুর্নামেন্টে প্রথমবার কোনো দল টস জিতে আগে ব্যাটিং নিল। কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই সুইং বোলিংয়ে সিলেটকে কাঁপিয়ে দেন বিলাল। তার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে উড়ে যায় মোহাম্মদ মিঠুনের বেলস। বলের গতি ছিল স্রফে ১১৯ কিলোমিটার। কিন্তু সুইং সামলানোর টেকনিক ছিল না মিঠুনের। ওই ওভারেই বিলালের সুইংয়ের শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত (৫)। গত বিপিএলে সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যান এবার এখনও পর্যন্ত চার ম্যাচ মিলিয়ে করলেন মোট ৬০ রান। আরেক প্রান্তে আঁটসাঁট বোলিং করেন আল আমিন হোসেন। প্রথম চার ওভারে সিলেট তোলে স্রফে ১১ রান। পঞ্চম ওভারে শহিদুল ইসলামের বলে হ্যারি টেক্টরের চার ও জাকির হাসানে ছক্কা-চারে একটু বাড়ে রান। পরের ওভারে জাকিরের আরও দুটি বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লেতে রান আসে ৩৫। টেক্টরের সঙ্গে জাকিরের জুটি জমে ওঠে। তবে খুব দ্রুততায় রান তুলতে পারেনি এই জুটি। ৫৭ রানের জুটি আসে ৪৯ বলে। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় নিহাদউজ্জামানের বাঁহাতি স্পিনে লং অনে ধরা পড়েন জাকির (২৬ বলে ৩১)। রায়ান বার্ল গিয়ে বাউন্ডারিতে শুরু করলেও পরে খানিকটা খেই হারান। টেক্টরও পারছিলেন না বাউন্ডারি আদায় করতে। সৈকত আলির স্লো মিডিয়াম পেসেও আটকে যান দুজন। একপর্যায়ে টানা ২৫ বলে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। সেই মন্থরতা পরে পুষিয়ে দিতে পারেননি টেক্টর। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দ্বিতীয় বলে তাকে ফেরান বিলাল। আইরিশ ব্যাটসম্যান ৪৫ রান করেন ৪২ বল খেলে। শেষ দিকে রানের গতি কিছুটা বাড়লেও প্রত্যাশিত ঝড় ওঠেনি। শেষ বলের বাউন্ডারিতে বার্ল অপরাজিত থাকেন ২৯ বল ৩৪ রানে। আসরে প্রথম খেলতে নেমে একটি করে চার ও ছক্কায় আরিফুল হক করেন ১২ বলে ১৭। কিন্তু এই রান যে যথেষ্ট ছিল না, তা প্রমাণ হয়ে যায় পরেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৩৭/৪ (শান্ত ৫, মিঠুন ১, টেক্টর ৪৫, জাকির ৩১, বার্ল ৩৪*, আরিফুল ১৭*; আল আমিন ৪-০-২১-০, বিলাল ৪-০-২৪-৩, শহিদুল ৩-০-২৯-০, নিহাদ ৪-০-২৭-১, শাহাদাত ২-০-১৯-০, সৈকত ৩-০-১৭-০)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৭.৪ ওভারে ১৩৮/২ (তানজিদ ৫০, আভিশকা ১৭, ব্রুস ৫১*, শাহাদাত ১৩*; আরিফুল ২-০-১৬-০, টেক্টর ২-০-২১-১, রেজাউর ৩-০-২১-০, তানজিম ২-০-১৯-১, হেমান্থা ৩.৪-০-২১-০, মাশরাফি ১-০-১৪-০, সামিত ৪-০-২২-০)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: বিলাল খান