ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) দ্বারা গৃহীত জাতীয় নির্দেশিকা যা গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ সনাক্তকরণ নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। ডিজিএইচএসের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিভাগের পরিচালক ডাঃ তাহমিনা সুলতানা গত সোমবার হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদনে নির্দেশিকাটি জমা দেন। প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং চিকিৎসকসহ সবাইকে নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছে। হাইকোর্ট এ বিষয়ে শুনানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, নির্দেশিকাটির শিরোনাম "জাতীয় নির্দেশিকা ফর দ্য প্রিভেনশন অফ সন প্রেফারেন্স অ্যান্ড দ্য রিস্ক অফ জেন্ডার-বায়সড সেক্স সিলেকশন, ২০২২"। ডিজিএইচএস জানায়, নির্দেশিকাটির উদ্দেশ্য হল গর্ভাবস্থার যে কোনো সময়ে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য প্রি-নেটাল ডায়াগনসিস পদ্ধতি এবং প্রি-নেটাল ডায়াগনসিস টেস্টের অপব্যবহার এবং লিঙ্গ নির্বাচনের জন্য বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার অপব্যবহার রোধ করার জন্য সচেতনতা তৈরি করা। এর আগে, ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট গর্ভাবস্থায় অনাগত শিশুদের লিঙ্গ সনাক্তকরণ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা ব্যাখ্যা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করে একটি রুল জারি করেছিল। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসানের করা এক রিট আবেদনের শুনানিকালে আদালত এ রুল জারি করেন। অনাগত শিশুদের লিঙ্গ সনাক্তকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা বন্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে একটি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলেন ইশরাত।
পুরুষের চেয়ে নারীরা ছেলেসন্তান চান বেশি: মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশুকে অগ্রাধিকার বেশি দিচ্ছেন মা ও বাবা। এমন পরিস্থিতিতে মেয়ে ভ্রুণের বৈষম্যের শিকার হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ভ্রুণের প্রতি পক্ষপাতিত্বের ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ না হলে সমাজে লিঙ্গবৈষম্য ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়বে। ইউএনএফপিএর সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা গেছে, প্রথম সন্তান ছেলে হোক-এটি চান ২৮ শতাংশ নারী ও ২৪ শতাংশ পুরুষ। অন্যদিকে প্রথম সন্তান মেয়ে হোক-এটি চান ১২ শতাংশ নারী ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ। ওই গবেষণায় ৩৪ শতাংশ নারী ভ্রুণের লিঙ্গ জানার জন্য চিকিৎসাপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার এখন ২ দশমিক ৩। এই সবই মেয়ে ভ্রুণের প্রতি বৈষমের পূর্বাভাস। আরও একাধিক গবেষণায় বাংলাদেশে মেয়ে ভ্রুণের প্রতি বৈষমের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।