আমাদের দেশে ডাক্তারকে অনেক সম্মানের চোখে দেখা হলেও তাদের কিছু অসৎ কর্মকাণ্ডে মানহানি হচ্ছে এই পেশার। বর্তমানে এই পেশায় অহরহ প্রতারণার নজির মেলে। মানুষ রোগ মুক্তির আশায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কেউ যান সরকারি হাসপাতালে, কেউ বেসরকারি বা প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা চেম্বারে। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকেই নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। কেননা দেশ জুড়ে ভুয়া ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট, মানহীন মেশিনসংবলিত ল্যাব, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্যাথলজির ভুয়া রিপোর্ট প্রদানসহ দালালনির্ভর ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি। এসব প্রতিষ্ঠান সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করছে। যাঁরা কিছু না জেনেই বছরের পর বছর রোগীদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। এসব অবৈধ ক্লিনিকের মূল লক্ষ্য অর্থ উপার্জন। চিকিৎসায় রোগী বাঁচল কি মরল, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। এর মধ্যে সারা দেশে অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে পাঁচ হাজার এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০ হাজার। কিন্তু এই অনুমোদিত হাসপাতালগুলো যে সব কিছু নিয়মমাফিক করছে তার নিশ্চয়তা কোথায়? অনেকগুলোতেই অনুমোদনের শর্ত মানা হচ্ছে না। জানা যায়, বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের তদারকি নেই বললেই চলে। অনেক ক্লিনিকেই প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নেই। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। প্রশিক্ষিত নার্স কিংবা অন্যান্য লোকবল নেই। ফি আদায়ে চলে বাড়াবাড়ি। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবেও রয়েছে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ। বলা হয়ে থাকে, পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া হয়, রিপোর্টে আগে থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সই করা থাকে ইত্যাদি। আমাদের চারদিকে যেন কেবলই অবৈধ কারবার। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান চললেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ব্যবসা চলছে। চিকিৎসাসেবায় চরম অরাজকতা বিরাজ করছে, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর পরিস্থিতি জটিল হয়েছে, অল্প সময়েই নিভে গেছে অনেকের জীবন প্রদীপ। বছরের পর বছর ধরে ভুয়া ডাক্তারকেন্দ্রিক নানা অরাজকতায় দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। ফলে ভুয়াদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রতারণা এড়াতে প্রশাসনকে নিতে হবে কঠিন ব্যবস্থা। সেই সাথে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তরুণ প্রজন্মকে।