টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমার প্রথম দিনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের বৃহত্তম জুমার জামাত। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মুসল্লি¬ ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ এই বৃহত্তম জুমার জামাতে বিভিন্ন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে শরিক হন।
জুমার জামাতে ইমামতী করে কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ। দুপুর দেড়টায় জুমার খুৎবা পাঠ শুরু করেন তিনি। পরে ১টা ৫০ মিনিটে জুমার জামাত আদায় করেন।
জুমার জামাতে শামিল হতে শুক্রবার সকাল থেকেই সর্বস্তরের মুসলমানরা টুপি, পাঞ্জাবী পরে জায়নামাজ হাতে ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দেশ বিদেশের অগণিত মুসল্লির সাথে একই জামাতে শরীক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বেশি সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে সকলের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাকুলতা। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই মুসল্লিদের ঢল আঁচড়ে পড়ে তুরাগের তীরে। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটে জুমার জামাতে।
টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আবদুল্লাহপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদে শুক্রবারের জুমার জামাতে মুসল্লি সংখ্যা ছিল খুবই কম। ইজতেমা মাঠে জুমার জামাত সুবিশাল প্যান্ডেলের গন্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করে চারপাশে।
ময়দানে তিল ধারণের ঠাই না থাকলেও বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিদের টঙ্গী মুখি স্রোত অব্যাহত রয়েছে। বহুল কাঙ্খিত আখেরী মোনাজাত পর্যন্ত এ স্রোত আরো প্রবল হবে। তুরাগ তীরবর্তী বিশাল প্রান্তরে নির্মিত পাটের চট ও লাইলন কাপড়ের প্যান্ডেল ইতোমধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
প্রথম দিন যারা বয়ান করলেন : ইজতেমা ময়দানে সমবেত লাখো মুসল্লির উদ্দেশ্যে বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা আহম্মদ বাটলা উর্দু ভাষায় আ’ম বয়ান শুরু করেন। তাঁর বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান। সকাল ১০ টায় তালিমী বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। বাদ জুমা বয়ান করেন জর্ডানের জিম্মাদার ওমর খতিব। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা জোবায়ের আহমেদ, বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মূলবয়ান মঞ্চ থেকে বয়ান করেন ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডা. সানাউল্লাহ। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নামাজের মিম্বর থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ডাঃ নওশেদ এবং ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণে স্থাপিত টিনশেড মসজিদে খাওয়াছের (বিশেষ ব্যক্তিবর্গে উদ্দেশ্যে) বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা আকবর শরীফ।
জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণ : গতকাল শুক্রবারের জুমার নামাজে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শরীক হন।
ইজতেমার ৬ মুসল্লির মৃত্যু: ইজতেমায় গত দুই দিনে ৪ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও দুইজনের মৃত্যু হয়। এনিয়ে ইজতেমার ৬মুসল্লির মৃত্যু হলো। এদের মধ্যে শুক্রবার জামালপুর জেলার পাকুল্লা এলাকার মৃত- হযরত আলী ছেলে মতিউর রহমান (৫৫), ভোলা জেলার গোলি এলাকার মৃত-নজির আহমাদের ছেলে মো.শাহ আলম ( ৬০), নেত্রকোনা জেলা সদরের মৃত-আব্দুস সোবহানের ছেলে এখলাস উদ্দিন (৭০) মারা যান। বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা জেলা সদরের কুনিয়া কুমরি বাজার এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আবদুস সাত্তার (৭০) মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ইজতেমায় আসার পথে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬৫) ও চাপাইনবাবগঞ্জের চৌহদ্দি গ্রামের জামান মিয়া (৪০) ময়দানে মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
এছাড়াও বিশ্ব ইজতেমার ডিউটিতে যাওয়ার পথে শুক্রবার সকালে বাসের ধাক্কায় হাসান (৩২) নামে পুলিশের এক এএসআই মৃত্যুবরণ করেছেন। নিহত হাসান মানিকগঞ্জ জেলার কোর্টে কোর্ট পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার লাশ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রয়েছে।
হারানো ও প্রাপ্তি : ইজতেমা মাঠের পশ্চিম দিকে হারানো ও প্রাপ্তি সেন্টার খোলা হয়েছে। ময়দানে কেউ কিছু হারালে ও কিছু পাওয়া গেলে সেখান থেকে সঠিক তথ্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
নামাজের কাগজ প্রতি পাতা ১০ টাকা, ৫টাকা : শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লি যারা নামাজের জায়নামাজ সাথে আনেননি তারা প্রতি পাতা নামাজের বড় কাগজ ১০ টাকা ও ছোট কাগজ ৫টাকা করে কিনে জায়নামাজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নামাজ শেষে ইজতেমা ময়দান ও রাস্তায় হাজার হাজার পত্রিকার পাতা ও নামাজ পড়ার কাগজ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ: শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথম পর্বে সৌদি আরব, জর্ডান, মিসর, ওমান, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, কাতার, কানাডা, কম্বোডিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানী, ইরান, জাপান, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, রাশিয়া, জিম্বাবুয়ে, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, আফগানিস্তান, কাতার, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, ইরিত্রিয়া, ভারত, দুবাইসহ বিশ্বের প্রায় অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ১হাজার ৯৮৩ জন বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে প্রথমপর্বে ইজতেমার। পরে চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা।