দেশে মাদক সেবন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই মাদকের শুরু হয়েছিল আশির দশকে। এ সময় অনেক মধ্যবয়সী মানুষও হেরোইন ও ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ে। সমাজের সকল বিভাগে এ মাদকের প্রাপ্যতা এবং ব্যবহার ছিলো লক্ষণীয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা। গত বছর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১৪ জন মাদকাসক্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে (রিহ্যাব)। এক গবেষণায় দেখা যায় মাদক গ্রহণকারী শনাক্তকরণ পরীক্ষা বা ডোপ টেস্টে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেশিসংখ্যক ব্যক্তি মাদক নিয়েছে। ২০২২ সালে পরীক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে মাদক নেওয়া ব্যক্তিদের হার ছিল প্রায় দেড় শতাংশ। এ বছর তা সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। আর মাদক গ্রহণকারী হিসেবে শনাক্ত ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশই গাড়িচালক। বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় মাদকের সহজলভ্যতার কারণেই মাদকাসক্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতা, ব্যর্থতার গ্লানি, একঘেয়েমি, একাকিত্ব এবং পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেকেই ঝুঁকছে মাদকের দিকে। মাদকদ্রব্য জব্দের পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, দেশে হেরোইনের অপব্যবহার বেড়েছে। গাঁজার অপব্যবহার ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে গাঁজার অপব্যবহার কিছুটা কমেছে। ফেনসিডিল ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে কিছুটা কমলেও ২০১৭ সালে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে স্থিতিশীল ছিল। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে ইনজেক্টিং ড্রাগের অপব্যবহার বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালে কমে ১৭ সালে আবারো বাড়ে। এই সময়ে বিভিন্ন সংস্থা অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। আর এই মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরাই বেশি। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠেছে মাদক বিস্তারের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশের ভয় না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে মাদক। মাদকাসক্ত অনেক শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়। কারো কারো শিক্ষা জীবন অসমাপ্ত থাকছে। পাশাপাশি এরা দিন দিন প্রবল আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছে। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসা সেবা গ্রহণকারী নারীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩২২ জন সেবাগ্রহণকারী নারীর মধ্যে ১৭৭ জনের আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল। এর মধ্যে ৯৮ জন কখনো না কখনো আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এবং পাঁচজন চিকিৎসা নেয়ার পরও শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি টেনেছে। মাদক মহামারীর সর্বনাশা বিস্তারের যেভাবে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি করছে, সেভাবে একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতে সৃষ্টি করছে বন্ধ্যত্ব। তাই এখনি কর্তৃপক্ষকে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ। তার তা না হলে এই মাদক আগামী প্রজন্মকে ঠেলে দেবে হুমকির মুখে।