গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত হরিমঞ্জুরী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিগত ১৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের নেই কোন আয় ব্যয়ের হিসাব। প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক একক আধিপত্য ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের ইচ্ছামতো চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলেন স্কুলের ১৪ জন সহকারী শিক্ষক। পরে এক অডিট রিপোর্টে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার উপরে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া।
এক বছরেও বিদ্যালয়ের প্রাপ্য টাকা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে জমা দেননি প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকরা লিখিত আকারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই দফায় ২৫ টির মতো অনিয়ম ও দুর্নীতির উল্লেখ করেন। অভিযোগ পেয়ে বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ করার জন্য এডহক কমিটি একটি আভ্যন্তরীণ অডিট করেন।
অডিট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ ও ২১ সালে বিদ্যালয়ে মোট আয় হয়েছে ৩৩ লাখ ৭২ হাজার ৪৪০ টাকা। তা থেকে প্রধান শিক্ষক ব্যয় দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা। উদ্বৃত্ত ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৭১ টাকা বিদ্যালয়ে ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়ের আনুপাতিক হারের পরিমাণ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা অডিট কমিটির কাছে দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।
অডিট কমিটির সদস্য ছিলেন, বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রধান। অডিট কমিটির সদস্য সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন ও সহকারী শিক্ষক ফয়জুন নাহার খানম এবং সাবেক পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ ফারুক। তাদের স্বাক্ষরিত অডিট প্রতিবেদন থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও এডহক কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রধান জানান, অডিট কমিটি দুই বছরে অনেক টাকার গরমিল পায়। বাকি ১২ বছরের একটি খসড়া হিসাব করেন অডিট কমিটি। সেখানে কোটি টাকার উপরে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। মোহাম্মদ আবদুল মালেক ১৪ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। সেই হিসেবে বহু টাকার হিসেব অডিট কমিটির কাছে তিনি দিতে পারেনি। তবে তিনি বলেছেন, বিদ্যালয়ের প্রাপ্ত টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা করে দিবেন।
ব্যাংক হিসেবের তথ্য মতে ২০১০ থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকের হিসাব নম্বরে ৮০ হাজার টাকার মত জমা পেয়েছিল অডিট কমিটি।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের পাওনা টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব নম্বরে ২০২২ ও ২৩ সালের আয় ও প্রধান শিক্ষক থেকে দেয়া সহ ৬ লাখ এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অনুদানের ৫ লাখ টাকার মত জমা রয়েছে।
হরিমঞ্জুরী পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মালেক তিনি কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদের দায়িত্বে রয়েছেন। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের বলেন, আমি স্বচ্ছ ভাবে প্রতিষ্ঠান চালিয়েছি। আমাকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে সরানোর অপচেষ্টা হিসেবে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ১৪ বছরের মধ্যে কোনো অভিযোগ নেই। হঠাৎ এখন এসে অভিযোগ করছে। ব্যাংক হিসাব সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বর্তমানে স্কুল হিসাব নম্বরে ৬ লাখ নয়, ১২ লাখ টাকা জমা আছে'।
অডিট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ অডিট ভালোভাবে হয়নি। অডিট সঠিক হলে আমার কাছে টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই'। স্কুলে বাৎসরিক ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার সম্ভাব্য আয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাৎসরিক এত টাকা আয় হয় না। এটা অডিটের ভুল'। রাজনীতিতে যুক্ত থাকা সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘এই বিষয়টি যদি অবৈধ হয় তাহলে আমি পদত্যাগ করবো। আমি কোনো সুযোগ নেওয়ার জন্য রাজনীতি করি না'
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালনা কমিটি না থাকাযর ফলে হিসেব-নিকেশ প্রধান শিক্ষক নিজেই রাখতেন। প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে আমি মৌখিকভাবে জেনেছি। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ এই বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করবে বলে আশা প্রকাশ করছি।
বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। যেহেতু আমি যোগদানের পূর্বে এই বিষয়গুলি। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং করা হবে। সকলের সিদ্ধান্ত ক্রমে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।