গভীর রাত। গরু গাড়িতে অনেকগুলো বস্তাভর্তি মাল বোঝাই করে ধুলো বালি আর কাঁচা রাস্তা মাড়িয়ে পীরগঞ্জ থানা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে পার হবার সময় ডিউটিরত পুলিশ কনষ্টেবল জিজ্ঞেস করলো দাঁড়াও গাড়িতে বস্তায় কি ? দম্ভভরে গাড়িয়াল উত্তর দিলো স্যার ব্যাটারী। আশ্চর্য হয়ে আবার প্রশ্ন,এতগুলো ব্যাটারী। পুলিশের সন্দেহ এগুলেঅ হিলি সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে আসা। এরপর যা ঘটলো গরুগাড়ী থানায় নিয়ে সম্স্ত বস্তা নামিয়ে রাখা হলো। ওসি সাহেব বাইরে গেছেন,তিনি ফিরে আসা পর্যন্ত। প্রত্যুষে যখন ওসি স্যার এলেন তখন তাঁকে সব খুলো বলা হলো। অতি উৎসাহী ওসি নিজেই বস্তার কাছে গিয়ে খুলতে বললেন। যা দেখা গেল,তা দেখে সকলের আক্কেল গুড়-ম। সবগুলো বস্তায় মিষ্ট আলু। শেষ পর্যন্ত গাড়িয়ালের একই কথা,স্যার এগুলো আমরা ব্যাটারী বলি। সকলে ব্যাটারী বললেই চেনে। এরপর যা হবার তাই হলো। শুধু হাসাহাসি। এ ঘটনা সত্তুর দশকের মাঝামাঝি সময়ের। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ পার হবার পর মিষ্টি আলুর চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষীরা এর আবাদ ছেড়েই দিয়েছিল। দীর্ঘদিন পর আবার রংপুরের পীরগঞ্জের চরাঅঞ্চলে চাষিদের আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে এই মিষ্টি আলু। কম খরচে সেচ,সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং স্বল্প সময়ে বেশি ফলনে আনন্দিত চাষিরা। বিগত বছর গুলোতে কিছুটা হতাশ ছিল,এবারে হতাশা কাটিয়ে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মিষ্টি আলুর চাষাবাদে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষককুল। করতোয়া নদীর জেগে ওঠা বালুচর কৃষকদের সোনার স্বপ্ন পুরণ করে চলছে। ধান,ভুট্টাসহ রবি ফসল উৎপাদন বেড়েছে অধিক হারে। তাই শুস্ক মওসুমে অন্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এলাকার জমির মালিক ও বর্গা চাষিরা। এলাকার সফল চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরাঞ্চলের বালু মাটিতে বন্যার পানি এসে বালুচরের উর্বরতা বেড়েছে। কৃষক তাদের ইচ্ছে মতো সবধরনের ফসলের চাষাবাদ করেন। করতোয়া নদী এলাকা ঘুরে কথা হয় মিষ্টি আলু চাষি ঘাষিপুর গ্রামের মনজু মিয়ার সাথে তিনি বলেন, বালুচর আমাদের এখন সোনার স্বপ্ন। আমরা বালুর নিচে যে কোন ফসলের বীজ বপন করি, সেই ফসলই বালুর নিচ থেকে হাসি মুখে ফুটে বের হয়। একসময় এই বালুচরে কোন আবাদ হতো না। এখন যে ফসলই বপন করি সেটাই হয়ে যায় আমাদের নতুন স্বপ্ন। আগে এলাকায় জমি বিক্রি হতো সস্তা দরে। এখন আর কেউ বালুচরে জমি বিক্রি করে না। কারণ বালুচর এখন কৃষকের আশার আলো। চতরা ইউনিয়নের কুয়াতপুর হামিদপুর গ্রামের আবু বক্করের ছেলে লিটন মিয়া এ প্রতিবেদক কে বলেন, আমি করতোয়া নদী এলাকায় ম্যাচনার চরে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে ২৩০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি আলু চাষ করেছি। লাল মিষ্টি আলুর বীজ মহাস্থান থেকে সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করি। অনেকটাই গোল আলুর মতো করে চাষ করেছি। এটি ৬০/৭০ দিনের মধ্যে জমি থেকে উঠানো যায়। বর্তমানে গাছ প্রতি ১০ থেকে ১২ টি আলু রয়েছে। তার ধারনা গাছ প্রতিটি গাছে দেড় থেকে দুই কেজি হারে আলু উৎপাদন হবে। বর্তমান মিষ্টি আলুর বাজার নয়’শ থেকে সাড়ে নয়’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শতক প্রতি ৩ মন আলু আসবে অই জমিতে। যার মুল্য দাঁড়াবে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। এলাকার চাষিরা বলছেন, মিষ্টি আলু পুর্বকাল থেকেই এ এলাকায় অনেক জনপ্রিয়। এই এলাকার মিষ্টি আলু দেশের বিভিন্ন স্থানে আমদানি পাঠানো হয়। এবছর মিষ্টি আলুর (চারা) বা ডাল বন্যার পানি খেয়ে গেছে, এতে করে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার পরেও উঁচু জমির (চারা) বা ডাল রোপণ করেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুষিবীদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কন্দল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোকি- ১৪, বারি-৭,৯ ও ১২সহ কয়েকটি জাতের মিষ্টি আলু উপজেলার ৪’শ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে চাষাবাদ করছে। ইতোমধ্যে চাষিরা হাটবাজারে বিক্রিও শুরু করেছে। আবহাওয়া চাষিদের অনুকূলে থাকায় ফলন অনেকটাই ভালো হয়েছে। তাছাড়াও বাজারে মিষ্টি আলুর চাহিদাও প্রচুর।