বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া মর্টারশেলের আঘাতে বাংলাদেশি নারীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন ও এক শিশু আহত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রামছাড়া হয়েছেন বেশ কয়েটি গ্রামের মানুষ। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) অনেক সদস্য পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সীমান্তের ওপার থেকে গোলাবারুদ এসে পড়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কোনো প্রভাব বাংলাদেশে যেন না পড়ে সেজন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত এলাকাজুড়ে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকার বা বিদ্রোহী, কারও পক্ষে অবস্থান নেয়নি বাংলাদেশ। এ ইস্যুতে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ ভূমিকায় আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমার বর্তমানে এক দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে থাকা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৬০ শতাংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। শুধু রাখাইন কেন, মিয়ানমারের একটি বড় অংশ এরইমধ্যে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এএ’র হামলার তীব্রতায় টিকতে না পেরে দেশটির সেনারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে রাখাইন হাতছাড়া করার কোনো ইচ্ছে জান্তা সরকারের যে নেই, তার ইঙ্গিত মেলে সেখানে সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পৌঁছে দিতে সাগরপথের ব্যবহার। এতে স্বভাবতই দুপক্ষের সংঘর্ষ আরও দীর্ঘ হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজভূমে কূটনৈতিক তৎপরতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধাগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে কৌঁসুলি কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করতে হবে সরকারকে। এদিকে মিয়ানমারে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান সংঘাতে ধৈর্য দেখানোর জন্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরাও মনে করি, চলমান পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বাংলাদেশকে।