রাজশাহী রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ধুমপায়ী তরুণদের নিষেধ করতে গিয়ে তাদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মাইনুল ইসলাম (৪৫) নামের এক আনসার সদস্য। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্ট্রিটিউটের শিক্ষার্থী তানভিরকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে জিআরপি থানায় মৃত আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামের স্ত্রী আলম আরা বেগমের দায়েরকৃত হত্যা মামলায় তানভিরকে (১৭) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিহত আনসার সদস্য মাইনুল ইসলাম রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাঙ্গনপুর পালপুর গ্রামের বাসিন্দা। আর গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। এ ঘটনায় মৃত আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামের স্ত্রী আলম আরা বেগম বাদী হয়ে জিআরপি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আনসার সদস্যকে মারপিটের ঘটনার সাথে জড়িতদের স্বনাক্ত করেছে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তানভির (১৭) ছাত্র মাইনুলকে মারপিট করেন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়ছে। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে রেলওয়ে থানার একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে তাঁরা কয়েকজন দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় স্টেশনের ৪ ও ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তিনজন তরুণ অস্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা ও ধুমপান করছিলেন। পরে তাদের চলে যেতে বলা হলে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে গালাগালও শুরু করেন। তখন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাদের ধরার জন্য আনসার সদস্যদের নির্দেশ দেন। এরপর ওই তরুণরা ৩ ও ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে পালানোর সময় ধরতে গেলে তাদের মধ্যে থাকা একজন তরুণ সেই আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামের বুকে ঘুষি মারেন। তখন মাইনুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আর অন্য আনসার সদস্যরা ঘুষি মারার পরপরই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ওই ছাত্রকে ধরে ফেলেন। ঘটনার পর আঘাতপ্রাপ্ত আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ইসিজি করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। খবর পেয়ে মাইনুলের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে আসেন। এ ঘটনায় রাজশাহী রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক আবু শাহাদাত জানান, আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামকে আঘাত করেছিল রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র তানভির (১৭)। নিহতের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় আনসার ভিডিপি রাজশাহীর কমান্ডার রাকিবুল ইসলাম জানান, মাইনুল ইসলাম রেলস্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজন যুবক রেলস্টেশনে ঘোরাঘুরি করছিলেন। এ সময় স্টেশনম্যানেজার আবদুল করিম ওই আনসার সদস্যকে স্টেশনে ঘোরাঘুরি করা যুবকদের পরিচয় নিশ্চিত হতে বলেন। ম্যানেজারের নির্দেশে তিনি ওই যুবকদের কাছে গিয়ে তাদের পরিচয় জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিত-া শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই ৪-৫ যুবক আনসার সদস্যকে মারধর করে। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্য আনসার সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে আনসার সদস্য মাইনুল ইসলামের মৃত্যু মারপিটের কারণেই হয়েছে নাকি হার্টএ্যাটাকে হয়েছে সেটি ময়নাতদন্তের পরই নিশ্চিত করা হবে।