স্বর্গ সুধা লুটাই ঘরে স্বামী-স্ত্রীর প্রেমে। দুঃখ কষ্ট সব ভুলে যাই ভালোবাসার আলিঙ্গনে। স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে হৃদয়ের ভাষাই বলি "একবার বলো আমি তোমায় ভালোবাসি। প্রিয়তমা স্ত্রীও জড়িয়ে ধরে বাকহীন কন্ঠে সোহাগ করে আমার ভালোবাসা গ্রহন করে। কথাগুলো বলছিলেন দেলোয়ার তার ভালোবেসে বিয়ে করা জন্ম থেকে বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি প্রিযতমা স্ত্রী পিংকি খাতুনকে নিয়ে। কালীগঞ্জ উপজেলার বুজিডাঙ্গা মন্দিয়া গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন ও হাজিপুর মন্দিয়া গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা এক মায়ের একমাত্র সন্তান পিংকি খাতুনের প্রেম কাহিনি হার মানাবে ইতিহাসের সব গল্প উপন্যাসের সকল প্রেম কাহিনীকে। বর্তমান সময়ে প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের প্রতিবন্ধি মেয়েকে কেউ ভালোবাসবে না। স্বপ্ন দেখবে না তাকে নিয়ে ঘর সংসার করার। কিন্তু দেলোয়ার জগতের সকল হিসাব নিকাশকে পাল্টে দিয়ে মনের একান্ত ইচ্ছায় এবং ভালোবাসার টানে প্রতিবন্ধী পিংকিকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করে যাচ্ছেন প্রায় এক যুগ হলো। ২০১৩ সালের পহেলা বৈশাখে নিজেদের গ্রামের হাইস্কুল মাঠে প্রধম দেখা মেলে পিংকি ও দেলোয়ারের। সুদর্শীনি পিংকিকে প্রথম দেখেই ভালো লাগে দেলোয়ারের। ঐদিন বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে একসাথে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় দেওলোয়ারের সাইকেলের পেছনে চেপে বসে পিংকি। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওলোয়ার পিংকিকে সাইকেল থেকে নামার জন্য বললেও সে নামে না। পরে যখন দেলোয়ার তার দিকে ফিরে নামতে বলল, তখন পিংকি বুঝতে পারলো তাকে নামার জন্য বলছে। এ সময় পাশে থাকা বন্ধু-বান্ধবীরা দেলোয়ারকে জানায়, জন্ম থেকে পিংকি কানে শুনতেও পারে না আবার কথাও বলতে পারে না। "এত সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে কথা বলতে পারে না,কানে শুনতে পারে না"-ব্যাপারটা দারণিভাবে দেলোয়ারের হৃদয়ে নাড়াদিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই দেলোয়ার অনুভব করল পিংকির প্রতি তার মনের ভেতর ভালোবাসা জন্মাচ্ছে ধীরে ধীরে। এরপর সে প্রায়ই পিংকিদের বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করতো তাকে একনজর দেখার জন্য। তার কিছুদিন পর পিংকি তার বান্ধবীদের মাধ্যমে দেলোয়ারকে জানিয়ে দিল সেও তাকে ভালোবাসে। দুজন দুজনার মনের আদান-প্রদান হওয়ার কয়েক মাস পরেই দেলোয়ারকে একদিন ডেকে পাঠালো পিংকির মা। আমার মেয়েকেক ভালোবেসে থাকলে তাকে বিয়ে করতে হবে। মায়ের এমন প্রস্তাবে দেলোয়ার মোটেও পিছু হটলো না। কোনো দয়া বা করুণা থেকে নয়শুধুমাত্র ভালোবাসার টানেই এক কথায় রাজি হয়ে গেল পিংকিকে বিয়ে করার জন্য। কয়েকদিন পর পিংকির মা ও নিকট আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে কালিগঞ্জে এসে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিয়ের পর যে যার যার বাড়িতে থাকতে লাগল। মাস দুই পর যখন দেলোয়ারের অভিভাবকরা ব্যাপারটি জানতে পারলো তখন দেলোয়ার খোলাখুলি তার বাবা-মাকে সাথে আলাপ করে পিংকির সাথে তার ভালোবাসা ও বিষয়ে ব্যাপারটি। দেলোয়ার মানবিক বিষয়ে বাবা-মা মেনে নিল ছেলের ভালোবাসার মানুষ পিংকিকে। এরপর পারিবারিক ভাবে প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। শুরু হলো তাদের ভালোবাসার সংসার। সংসার জীবনে দেলোয়ার পিংকি দম্পতির রয়েছে তিনটি সন্তান।বর্তমানে জীবন-জীবিকার তাগিদে দেলোয়ার থাকতে হয় ভালোবাসার স্ত্রী সন্তানকে বাড়িতে রেখে সুদার ঢাকা শহরে। তিনি ঢাকার কাকরাইলে একটি অ্যাম্বুলেন্স চালান। শাশুড়ি তিন সন্তান এবং বাবা-মায়ের সাথে মিলেমিশে সংসার করছেন পিংকি। এক হাতেই সামলান সংসারের সব কাজ। সব সময় যোগাযোগ হয় স্বামী দেলোয়ারের সাথে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে। বাকহীন কন্ঠেই স্বামীর সাথে চলে স্ত্রী পিংকির সংসারের খুটিনাটি সব আলাপ-আলোচনা, নিজের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার কথা। দেলোয়ার ও পিংকির এ ভালোবাসা যেনো জন্ম জন্মান্তরের। এ যুগোল এভাবেই একে অপরকে ভালোবেসে যেতে চান জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। অত্যন্ত সৎ, বিনয়,ভদ্র,নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল এবং মানবিক হ্রদয়ের দেলোয়ার হোসেন নিজের ভালোবাসা ও প্রিযতমা স্ত্রীকে নিয়ে এই জানান, সুখ নিজের মানসিক বিষয় যা নির্ভর করে নিজের চাহিদার উপর। পিংকিকে ভালোবেসে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছি। আজ সে আমার সন্তানদের মা। আল্লাহতায়ালা হয়তো তাকে কানে শোনা কিংবা মুখে কথা বলার ক্ষমতা দেননি। কিন্তু বাকি সব গুণগুলো আমার স্ত্রী পিংকির মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, পিংকি অনেক গুণে গুণান্বিত একটি মেয়ে। সংসার জীবনে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ও অনেক ভালো। আমার স্ত্রীর স্বপ্ন সে নিজের পায়ে দাড়াতে চায়। সে খুব ভালো সেলাই মেশিনের কাজ জানে। কিন্তু আমার একার পক্ষে সংসার চালিয়ে আলাদা ভাবে তার সেলাই কাজের জন্য পুঁজি যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্ত্রী পিংকির পাশে দাড়াতে পারলে সেও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠত বলে আমি বিশ্বাস করি। সে অবদান রাখতে পারতো সমাজ উন্নয়নে। আমি আমার প্রিযতমার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য সকলের নিকট দেয়া চাই।