বাগেরহাটের শরণখোলায় সরিষার চাষে ব্যপকভাবে কৃষকরা ঝুকে পড়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের মনমুগ্ধকর রূপ ও সৌরভে এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে। চোখ জুড়ানো নির্মল বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে হলুদের চাদরে ঢাকা সরিষা ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধের গুনাগুন ও ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ ঘানি ভাঙ্গা সরিষা থেকে ৩৮ শতাংশ তৈল ও ২৫ শতাংশ খৈল পাওয়া যায়। এ তেল সুস্বাদু ও শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় ও হজমে সাহায্য করে। সুন্দর এ দৃশ্য চাষী ও পথচারীদের আকৃষ্ট করছে। অল্প খরচ আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষে দিন দিন চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। তারা নিজেদের চাষ করা ভেজাল মুক্ত সরিষার তেলের চাহিদা মিটেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। চলতি মৌসুমে পাঁচ শতাধিক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ হলেও চাষীদের আগ্রহ দেখে আগামী বছর এক হাজার বিঘা জমিতে সরিষা আবাদের টার্গেট নিয়েছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মশিউল আলম জানায়, বারি সরিষা ১৪ ও ১৭ এবং বিনা সরিষা ৯ জাতের উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষ করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক বিঘায়। চাষীদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য ১০ টি প্রদর্শনী ও ২৮০ জন চাষীকে সরিষার বীজ ও ১০০ জন চাষিকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নে পূর্ব খোন্তাকাটা, মঠেরপাড়, রাজৈর সরিষার বেশি আবাদ হয়েছে। পূর্ব খোন্তাকাটা গ্রামের বাসিন্দা স.প্রা.বি. অব. প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হারুন অর রশিদ এ প্রতিনিধিকে বলেন, এ মাঠে একসময় ধান আর খেশারীর চাষ হতো। ৩/৪ বছর ধরে ব্যাপক আকারে সরিষার চাষ হচ্ছে। খেশারী ডালের চেয়ে তিন চার গুন বেশি আয় হয় সরিষা চাষে। তাছাড়া তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তিনি বলেন কৃষি বিভাগের এক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ হই। এই প্রথম ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আগামী বছর ১০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করব ইনশাআল্লাহ। আমার নিজস্ব টিলার ও পানির পাম্প রয়েছে। একই গ্রামের মোঃ মহিউদ্দিন মধুসহ কয়েকজন সরিষা চাষি তাদের ঐ মাঠে গত বছর প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ হলেও এবছর হয়েছে ৪০০ বিঘায়। আগামীতে আরও বাড়বে। মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, তিনি ৩৩ শতক জমির প্রদর্শনী পেয়ে সরিষার চাষ করেছেন। অনেক সুন্দর হয়েছে। তার পাশাপাশি অনেক চাষি ওই এলাকায় সরিষার চাষ করেছেন। খরচ কম ও অধিক লাভ জনক এজন্য আমিসহ অনেকেই এ বছর প্রথম সরিষার চাষ করেছি। খেন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন এ প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলার মধ্যে আমার ইউনিয়ন কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা। কৃষকরা অনেক সচেতন। কৃষি বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও তদারকির কারণে এলাকায় কৃষি বিপ্লব ঘটছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আমার প্রচেষ্টায় খোন্তাকাটা ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ জমিতে এখন রবিশস্য রয়েছে। সরিষাসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে এলাকার অসংখ্য চাষি। কৃষকদের পরিশ্রমে নানা সাজে সু-সজ্জিত হয়েছে খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ। উপজেলা কৃষি অফিসার দেবব্রত সরকার বলেন, কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ভাবে ভোজ্য তেলের প্রধান ফসল সরিষার তেলের চাহিদা মিটাতে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চাষীদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। কৃষকদের ভাগ্য বদলের চাষ সরিষা আবাদ। আগামীতে সহশাধিক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। খেতে পোকার আক্রমণ নেই। বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, তেল ভাঙ্গানোর রিফাইন মেশিন এলাকায় স্থাপনের জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে।