মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে কলেজছাত্র মিজানুর রহমান (২১) কে মারধর ও পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একদল বখাটে। তাদের দাবিতে ৫ হাজার টাকা দিলেও, মিজানুরকে ছাড়েনি। উল্টো বেধরক মারপিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মিজানুর। পাবনার সদর উপজেলার কলেজছাত্র মিজানুর রহমান হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে হত্যার সাথে জড়িত ৫ আসামীকে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি মিজানুর রহমানকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। আর পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। নিহত মিজানুর সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। তিনি আটঘরিয়া সরকারি (অনার্স) কলেজে এইচএসসি মানবিক বিভাগে লেখাপড়া করতেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, পাবনা পৌর এলাকার চক ছাতিয়ানী মহল্লার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রাফিউল ইসলাম রাফি (২৩), একই মহল্লার আবদুল গাফফারের ছেলে নাঈম ইসলাম (২৪), শালগাড়িয়া নিকারীপাড়া মহল্লার বনি ইসরাইলের ছেলে ইয়াছিন আলী রাহাত (২৩), মধ্য শালগাড়িয়া মহল্লার মৃত ইলিয়াস আলীর ছেলে ইসতিয়াক মাহমুদ মিশন (২৪) ও রাধানগর নারায়নপুর মহল্লার শফিকুল ইসলাম শফিকের ছেলে শরিফুল ইসলাম শরিফ (৩৯)। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম। তিনি জানান, গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অভিযুক্ত রাফিউল ইসলাম রাফি তার মোবাইল ফোন দিয়ে কলেজছাত্র মিজানুর রহমানের ফোনে কল করে পাবনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের পিছনে ডেকে নিয়ে আসে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন অভিযুক্ত ইয়াছিন আলী রাহাত, নাঈম ইসলাম, শরিফুল ইসলাম শরিফ, ইসতিয়াক মাহমুদ মিশন সহ আরো কয়েকজন। মিজানুর রহমান আসামাত্রই অভিযুক্তরা তাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে মিজানুরের মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার কাছে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম কল করে ২০ হাজার টাকা দাবি করে এবং বলে টাকা না দিলে তার ছেলের সমস্যা হবে। তখন কোনো কিছু ভেবে না পেয়ে মিজানুর রহমানের বাবা অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনে কথা বলে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু নিজেদের চাহিদামাফিক টাকা না পাওয়ায় মিজানুর রহমানকে আবারও মারধর করতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে মিজানুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে অভিযুক্ত আসামি রাফিউল ইসলাম রাফি, ইয়াছিন আলী রাহাত, নাঈম ইসলা, অনিক আহম্মেদ রিয়াদ মিলে তাকে আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে রেখে পালিয়ে ঢাকা চলে যায়। বাকিরা পাবনায় আত্মগোপন করে থাকে। পরবর্তীতে মিজানুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১ ফেব্রুয়ারি মারা যায়। এ ঘটনায় পাবনা সদর থানার মামলা দায়ের করেন নিহত মিজানুর রহমানের পিতা শহিদুল ইসলাম। মামলা নং-০১। এরপর অভিযানে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি এমরান মাহমুদ তুহিনের নেতৃত্বে একটি দল। তারা তথ্য প্রযুক্তি ও সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার সাভার থানার আমিনবাজার এলাকা থেকে প্রথমে রাফিউল ইসলাম রাফি, ইয়াছিন আলী রাহাত ও নাঈম ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে পাবনা সদর থানার রাধানগর ডিগ্রী বটতলা এলাকা থেকে শরিফুল ইসলাম শরিফ ও ইসতিয়াক মাহমুদ মিশনকে গ্রেপ্তার করা হয়।