ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভূমি দস্যুদের কবল থেকে সরকারী ঘাটলা উদ্ধার করেছেন উপজেলা প্রশাসন। গত ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ঘাটলাটিতে মাটিচাপা দিয়ে দখলে রেখে বাণিজ্য করছিল স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। ঘাটলাটি উদ্ধারের জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ি ও সাধারণ মানুষ একাধিকবার আন্দোলন সংগ্রাম মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। গণমাধ্যমে বিষয় গুলো ফলাও করে প্রচার হয়েছে। ৮ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ বিষয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা চলছে। অবশেষে গত বুধবার অরূয়াইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সরজমিনে দিনভর অভিযান চালিয়ে ওই ঘাটলা উদ্ধার করা হয়েছে। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলেছে বাজারের ব্যবসায়ি ও সাধারণ লোকজন। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নদী ও সরকারী জায়গা দখলে অরূয়াইলে ভূমি খেঁকো প্রভাবশালী একাধিক চক্র রয়েছে। জায়গার দখল ধরে রাখতে এরা ইউএনও’র বিরূদ্ধেও মামলা করার রেকর্ড করেছে। অরূয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের সীমানার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিতাস নদীর শাখা। নদীটির অরূয়াইল পাকশিমুল বাজার এলাকার অগণিত অংশে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি ভূমি দস্যু চক্রের। তারা বিভিন্ন কৌশলে মাটি বা ময়লা ফেলে আস্তে আস্তে নদী ভরাট ও পরে দখল করে ফেলে। সেখানে ধীরগতিতে দিনে রাতে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করে মার্কেট ও দোকানঘর করে দখল পাকাপুক্ত করেন। অনেক সময় স্থানীয় ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করেই নির্মাণ কাজ করেন। আর উপজেলা প্রশাসন নড়চড়া করলেই সাময়িক ভাবে থেমে যায় সেখানকার ভূমি খেঁকোরা। সেখানকার ভূমি খেঁকোদের সরকারী জায়গায় নির্মিত দোকানে লাল কালির দাগ দিয়ে উচ্ছেদ পক্রিয়ায় এগুতে থাকলে ভূমি দস্যুরা সাবেক ইউএনও মো. এমরান হোসেনের বিরূদ্ধে মামলা করে দিয়েছিলেন। আজ থেকে ১০ বছর আগে মেঘনা তিতাস দিয়ে বয়ে আসা নৌকার মালামাল সহজে উঠা নামার করার লক্ষে অরূয়াইল বাজারে বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল একটি পাকা ঘাটলা। ঘাটলাটি নির্মাণের কিছুদিন পরই ভূমি দস্যু চক্রের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সেখানে। ওই চক্রটি স্থানীয় সর্দার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাগে আনেন। একসময় ওই ঘাটলাটির উপর মাটি ফেলে ভরাটের কাজ শুরূ করে। বাজারের ব্যবসায়ি ও স্থানীয় লোকজন বাঁধা দেন। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। সংঘর্ষ সংঘাত নিরসনে পুলিশ প্রশাসন সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে ঘাটলা মাটি চাপা দিয়ে উপরে দোকানপাট করে ফেলে। একসময় ওই চক্রটি তোহা বাজার ও সরকারী জায়গা দখল করে আরো এক দেড়শত দোকান নির্মাণ করে। অতিসম্প্রতি অরূয়াইল বাজারের ওই সকল অবৈধ দখল নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়। আমলে নেন উপজেলা প্রশাসন। তাই গতকাল সকালে অরূয়াইল বাজারে মসজিদ সংলগ্ন ওই ঘাটলাটি উদ্ধারে প্রথম অভিযান শুরূ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহফুজ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ইউপি আ.লীগের সভাপতি আবু তালেব, স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সদস্য ও বাজারের ব্যবসায়িরা। মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উদ্ধার অভিযানটি যেন কারো ইশারায় বন্ধ না হয়। এ ছাড়া আমরা দায় সারা অভিযানও আশা করি না। পুরো ঘাটলাটি উদ্ধার চাই। সরকারী একটি খালের মুখ ভরাটের মাধ্যমে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন ডেসার এক সাবেক কর্তা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই অরূয়াইলবাসী। নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, সরকারী স্থাপনা উদ্ধার একটি চলমান পক্রিয়া। এরই অংশ হিসাবে মাটি ও আবর্জনার নীচে পড়ে থাকা ঘাটলাটি উদ্ধারের কাজ শুরূ হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, সরকারী জায়গা এখানকার সাধারণ মানুষ দখল করেন না। দখল বাণিজ্যের সাথে যুক্ত স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। এরাই ঘুরে ফিরে সাধারণ মানুষদের শোষণ করছে। আমার কল্পনাতেও ছিল না এই ঘাটলাটি উদ্ধার হবে। বর্তমান ইউএনও মহোদয়ের সহযোগিতায় সরকারী খরচে নির্মিত মাটিচাপায় থাকা ঘাটলাটি উদ্ধার হলো।