কর্তৃপক্ষের অবহেলা, উদাসিনতা ও তত্বাবধানের অভাবে কালীগঞ্জের টেলিফোন অফিসটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে অযোগ্য হয়ে পড়েছে ব্যবহারের। উপজেলার সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ বেশির ভাগ টেলিফোন গ্রাহকের সংযোগ এখন অচল। কয়েকজন গ্রাহক জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাদের টেলিফোন লাইন অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। বহুবার জানানোর পরও মেরামত করা হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহে টেলিফোনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মুঠো ফোন চালুর পর থেকে টেলিফোনের ব্যবহার কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় এসে দাড়াবে এমনটা দেখা দিচ্ছে। টেলিফোনের ব্যবহার অনেকটা কমে গেছে। অফিসে তেমন কোন কাজকর্ম নেই।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানির লিমিটেডের কালীগঞ্জ ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জের প্রাচীন বেষ্টিত দ্বীতল ভবনের অফিস অবস্থিত। দেখতে চাকচিক্য হলে ও বর্তমানে অনেকটা অচল অবস্থার অফিসের কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। অফিসটিতে সার্বক্ষনিক কাউকে পাওয়া যায় না,কালের স্বাক্ষীরমত দাঁড়িয়ে রয়েছে অফিসটি। এ অফিসে গ্রাহকদের আনাগোনা ও কাজের তোড়জোড় দেখা মেলে না। কালীগঞ্জ টেলিফোন অফিসটি ১৯৯৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ৬০০ ডিজিটাল গ্রাহকের লাইন উদ্বোধন করেন। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা দাড়িয়েছে মাত্র ১৪২ টিতে। বর্তমানে চালু থাকা সংযোগ গুলোর মধ্যে আবার অধিকাংশ সংযোগই সরকারি দপ্তর সমূহের এবং সাধারন গ্রাহকের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগ গ্রাহকের টেলিফোন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু প্রতি মাসে তাদের কাছে টেলিফোনের বিল পাঠানো হচ্ছে। এদিকে অনেকে বলছেন কর্তৃপক্ষের একাথিকবার বরঅর পর ও তাদের টেলিফোন সয়যোগ চালু করে দিতে পারছে না ফলে তারা সংযোগ ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। টেলিফোন সংযোগ রেখে কোন প্রকার কাজে আসছে না, নামেই দেখা মিলছে টেলিফোন। অনেক সরকারি অফিসে ও টেলিফোন রয়েছে কোন টা চালু আবার কোন টা মাসের পর মাস বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি কালীগঞ্জ উপজেলার বিআরডিবি অফিসে দেওয়া হয়েছে সর্বশেষ নতুন একটি সংযোগ। কিন্তু ঐ বছরে একটি ছাড়া নতুন করে কোন সংযোগ দিতে পারেনি ও কোন গ্রাহক সংযোগ নিয়ে আগ্রহী হয়নি। যেখানে কালীগঞ্জে একসময় ৬০০ গ্রাহক ছিল সেখানে এখন মাত্র ১৪২ টি গ্রাহক রয়েছে তাও আবার সব গুলো চালু নেই। টেলিফোন থেকে টেলিফোনে কল চার্জ সম্পূর্ণ ফি এবং প্রতি বছর ১৭৩ টাকা মাসিক চার্জ দিতে হয় এসব গ্রাহকদের। টেলিফোন থেকে মোবাইলে বা মুঠোফোনে কলরেট মিনিট প্রতি মাত্র ৫২ পয়সা। বর্তমানে কালীগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে মাত্র তিনজন ব্যাক্তি কর্মরত থেকে এ অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মংরত এ ৩ জন প্রতিদিন অফিসে ঠিকমত আসেন না,তারা তাদের ইচ্ছামত অফিসে আসেন। এ অফিসে অপারেটন, লাইনম্যান ও কোন টেকনিশিয়ান নেই। যে ৩ জন আছে তারা কেউ কালীগঞ্জ থাকেন না, আসেন ঝিনাইদহ, কোটচাদপুর ও যশোর থেকে। তারা কবে কোন সময় অফিসে আসেন কেউ বলতে পারে না। একজন পিয়ন মাঝে মধে এসে গ্রাহকের মাসিক বিল দিয়ে চোলে যান।
কর্মরত ব্যক্তিরা হলেন, ইনচার্জ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, লাইনম্যান মশিয়ার রহমান ও জাহিদুল ইসলাম। দীর্ঘদিন এ ৩ জন কালীগঞ্জ অফিসে গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। উপরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ অফিসের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহন করেন না। বর্তমানে কালীগঞ্জ টেলিফোন লাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, জনবল সংকট, আধুনিক সেবা প্রদানে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ গ্রহন না করা ও পুরাতন যন্ত্রাংশের কারণেই টেলিফোনের আজ এই করুণ অবস্থায় পরিনত হয়ে দাড়িয়েছে। কালীগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি নতুর সংযোগ নেওয়ার জন্য অফিসে গিয়ে দেখতে পার অফিস টি তালাবদ্ধ ফলে কাউকে না পেয়ে তারা ফিরে আসেন। যে কারণে সে সব ব্যাক্তিরা টেলিফোনের নতুন সংযোগ নিতে পারেননি। এ অফিসে প্রতিদিন কাউকে পাওয়া যায় না, অধিক সময় অফিসটি বন্ধ থাকে। অফিসের সামনে বিদ্যুতের লাইট সর্বসময় জোলেই থাকে। দেখলে মনে হয় এ অফিসে কেউ চাকরি করে না। বিদ্যুতের একাধিক লাইট দিনের পর দিন জলতেই থাকে বন্ধ করার লোক নেই। দায়িত্বরত ব্যাক্তিরা নিয়মিত তাদের কর্মস্থলে আসে না। যে কারণে বিদ্যুতের লাইট গুলো জলতেই থাকে। কোন কিছু সমস্যা হলেই যোগাযোগ করতে হয় ঝিনাইদহ অফিসের উদ্ধতস কর্তপক্ষের সাথে। কালীগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে এডিসিএল সংযোগ প্রদান করা হলেও তার গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ৩ জন। এই ৩ জন গ্রাহকের মধ্যে উপজেলা সমাজসেবা অফিস,অন্য ব্যাক্তিরা হলেন আনারুল কবির এবং হাফিজুর রহমান রহমান।
কালীগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে এ ডি সি এল এর সংযোগ নেওয়া গ্রাহক হাফিজুর রহমান বলেন, তিনি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে ৫,শ এমবিবিএস ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়েছে। সার্ভিস ভালো পাচ্ছেন। এক সময়ে এ অফিসে ১৮/২০ জন চাকরি করতেন। অফিস টি দিন রাত ২৪ ঘন্টা কর্মরত ব্যাক্তিরা থাকতেন, সাথে একটি টেলিগ্রাম অফিস চালু ছিল। টেলিগ্রাম অফিসটি পরিত্যাক্ষ অবস্থায় পড়ে রয়েছে, চোরে ভবনটির জানালা,দরজা খুলে নিয়ে গেছে। অনেকে পরিত্যাক্ত ভবনের মধ্যে মাদক সেবন করে দিন রাত সব সময়। এসব দেখার কেউ নেই। এদিকে কালীগঞ্জ টেলিফোন অফিসের ০২৪৭৭৭৪৮৪০০ এই নাম্বার টিতে যোগাযোগ করলে ফোন ধরার কাউকে পাওয়া যায় না।
কালীগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের ইনচার্জ মোঃ সালাউদ্দিন জানান, আমাদের জনবল খুবই কম থাকায় গ্রাহক সেবা ঠিকমত দিতে পারছি না। মোবাইল ফোন চলমান থাকায় সাধারন মানুষ টেলিফোন তেমন টা ব্যবহার করতে চায় না। অনেক গ্রাহক তাদের টেলিফোন বিকল হয়ে পড়ে থাকলে ও সচল করতে চায় না। ক্রমান্বয়ে গ্রাহক সংখ্যা কম হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনের কারণে টেেিফান এখন চালাতে চায় না ও কদর কম হয়ে গেছে। একসময় টেলিফোন সংযোগ নেবার জন্য মানুষ দৌড়াদৈাড়ি করতো, সে সময়ে ব্যবসায়িরা তাদের প্রতিষ্ঠানে টেলিফোন ব্যবহার করতো আবার বাসাবাড়িতে ঘরের সোভা ও কথা বলার জন্য টেলিফোন ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন নাকি মোবাইল ফোনের কারণে টেলিফোন ব্যবহার করতে চাচ্ছে না। গত ১৮ ফেব্রয়ারি শহরের ফয়লা গ্রামের এক গ্রাহক বলেন, তার ফোনটি অনেকদিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে, কালীগঞ্জ অফিসে যোগাযোগ করেও ঠিক করে দিতে পারেনি, যে কারণে রাগে ক্ষোভে তিনি এবার টেলিফোন সংযোগটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে দিবেন বলে জানান। অনেকের টলিফোন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে তারা মেরামত বা সমযোগ চালু করতে আগ্রহ নেই। কিছুদিন আগে শিপন কম্পিউটার দোকানের টেলিফোন ও কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছেন। এভাবে প্রায় ৪৫০ গ্রাহক হসতান্তর করে দিয়েছে। অনেক সময় টেলিফোন সেট নষ্ট হলে মেরামত করতে পাঠাতে হয় ঝিনাইদহ অফিসে,যেহেতু সেখানে উন্নত ও দক্ষ টেকনিশিয়ান রয়েছে।
ঝিনাইদহ বিটিসিএল অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আবু জাহিদ বলেন, টেকনোলজি নতুন করে আপগ্রেড করা হচ্ছে গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য। ঝিনাইদহ জেলা শহরে জিপিওএন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সর্বাধুনিক টেকনোলজি সমৃদ্ধ হাইস্পিড ইন্টারনেট এবং টেলিফোন সংযোগ নিতে জেলা শহর গুলোতে গ্রাহকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ভালো সাড়া মিলেছে। উপজেলা শহরে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে, অচিরেই চালু করা হবে।