নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চাঁন্দাশ মুখদম শাহ্ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য ও কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর ওই বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানানো হলেও গতবছর ১৭ নভেম্বর পাঁচটি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য মোটা অংকের টাকা নিয়ে উপযুক্তদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একই পরিবার থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে। এরা নিয়োগের আগে জমি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করেছেন। উচ্চবিদ্যালয়ের কর্মচারিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর হলেও ৪১ বছর বয়সী একজনকের নিয়োগ দানের অভিযোগ করা হয়েছে। নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ পাওয়া ওই ব্যক্তির নাম আহসান হাবিব। চাঁন্দাশ গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ রয়েছে ৭ এপ্রিল ১৯৮২। ভোটার তালিকাতেও তাই। সেই হিসেবে নিয়োগের সময় তার বয়স হয় ৪১ বছরের বেশি। একই সময় তার স্ত্রী রেশমি বেগমকে আয়া পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার দুদিন আগে গতবছর ১৫ নভেম্বর আহসান হাবিব তার চাঁন্দাশ মৌজার ২ বিঘা ২ কাঠা জমি হামিদা বেওয়ার কাছে বিক্রি করে (দলিল নং ৭৭৪৩) টাকা সংগ্রহ করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে শিপ্রা রাণী নামে একজন রবিদাস শ্রেণির মহিলা ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাস্টার রোলে কাজ করে আসলেও তাকে বাদ দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাদেকুল ইসলাম নামে একজনকে। প্রতিটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতি ক্লাসে ৫৫ জনের বেশি ভর্তি না করার বিধান রাখা হলেও ওই বিদ্যালয়ে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নেয়া হয়েছে ৮১ জনকে। ভর্তির সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে অন্যান্য ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে। গতবছর যারা টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল তাদের কাছ থেকে প্রতি বিষয় অকৃতকার্যের জন্য দেড় হাজার টাকা করে প্রতিজন চার হাজার থেকে আট হাজার টাকা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। করেনাকালীন সময়ে গত ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের সময় নেয়া টাকা প্রতিটি বিদ্যালয়কে ফেরৎ দেয়। এ সময় চাঁন্দাশ মুখদম শাহ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ৯৯ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করে। তাদের দেয়া টাকা শিক্ষা বোর্ড ফেরৎ দিলেও গত তিন বছরেও সে টাকা শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আহসান হাবীবের মোবাইলফোনে বার বার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এসব বিষয় জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মন্টু অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জানান, নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগপ্রাপ্ত আহসান হাবিব ওই বিদ্যালয়েই ২০০১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছে। সেসময় তার যে বয়স লেখা ছিল পাশের সার্টিফিকেটে তাই দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তার সয়স ৩৫ বছরের কম হয়। রবিদাস শ্রেণির মহিলা শিপ্রা রাণী পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে আবেদন করলেও পরীক্ষার সময় উপস্থিত হননি। নিয়োগপ্রাপ্ত কারো কাছ থেকেই টাকা নেয়া হয়নি। অভিযোগ দায়েরের পর গত টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের কাছ থেকে নেয়া লক্ষাধিক টাকা ফেরৎ দেয়া হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা বোর্ডের ফেরৎ দেয়া টাকা বিদ্যালয়ের একাউন্টে জমা আছে। শিক্ষার্থীরা প্রশংসাপত্র নেয়ার সময় যে টাকা দিতো, তা না নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের ফেরৎ দেয়া টাকা প্রশংসাপত্র নেয়া বাবদ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে জানান, নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ পাওয়া আহসান হাবিব তার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বলে জানিয়েছিল। একারণে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দেয়া অষ্টম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেটের জন্মতারিখ ধরেই তার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। সে অনুযায়ী তার বয়স অনুমোদিত বয়সের চেয়ে বেশি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় সম্পূর্ণ বেআইনী। এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।