রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ৫৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নেই। গোটা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫’শ ৬টি। শহীদ মিনার না থাকায় ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন না। প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণের অভিযোগ সরকারি ও বেসরকারি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সরকারি অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। অর্থ সংকটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে মর্মে উপজেলা প্রশাসনের অভিমত। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের যে সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেগুলোতে অতি দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো যথাসম্ভব দ্রুত সংস্কার করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধও করা হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মু: মাহমুদ হোসেন মন্ডল জানান, উপজেলায় ২৬টি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটিতে শহীদ মিনার নেই। ৭৮টি মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের মধ্য ৫০টিতে, ২টি স্কুল এ- কলেজের প্রতিটিতে, ৫৩টি দাখিল, আলিম ও ফাজিল, কামিল মাদ্্রাসার মধ্য ১০টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। ১৪টি উচ্চমাধ্যমিকও ডিগ্রী কলেজের ১২টিতে, ১০টি কারিগরি ও ভকেশনাল (বিএম) থাকলেও ০২টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় ৫৪টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী ও সম্ভাব্য ৮/১০টি পাবলিক (প্রাইভেট) স্কুল থাকলেও কোনটিতেই শহীদ মিনার নেই। মাদ্্রাসা ও নি¤œমাধ্যমিকসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার না থাকা প্রসঙ্গে তিনি জানান, উপজেলার কয়েকমাস হলো যোগদান করেছি। ভুতপুর্ব কর্মস্থল গাইবান্দার সুন্দরগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাউশি’র মহাপরিচালকের নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়ন হলেও পীরগঞ্জের ভিন্ন চিত্র। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকায় অর্থ সংকটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তবে শহীদ মিনার নির্মাণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান তিনি। শহীদ মিনার না থাকা কুমেদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু আজাদ বাবলু জানান, স্থান সংকুলান না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরই শহীদ মিনার নির্মাণ করবো। শহীদ মিনার না থাকা পীরগঞ্জ বিজ্ঞাণ ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান জানান, বর্তমানে কলেজে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরই শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ আরম্ভ হবে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ের ব্যাপক উৎস থাকার পরও শহীদ মিনার না থাকা খালাশপীর দারুল হুদা স্নাতক ফাজিল মাদ্্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান,প্রতিষ্ঠানের প্রধান অবসরে গেলে কিছুদিন আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছি। অতীতে দায়িত্বরত অধ্যক্ষ শহীদ মিনার কেন নির্মাণ করেননি তা জানি না। তবে আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্য শহীদ মিনার নির্মাণ করবো। মাদারগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্্রাসায় নিজস্ব আয়ের প্রায় ২৫ একর সম্পত্তি থাকলেও সেখানে নেই শহীদ মিনার। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবু বকর মন্ডল জানান, মাউশি’র মহাপরিচালকের চিঠি গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি এবং শহীদ মিনার নির্মানে উপলব্ধি হয়নি। এদিকে উপজেলা সদরের পীরগঞ্জ ফাজিল মাদ্্রাসাতেও শহীদ মিনার নেই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সদস্য খলিলুর রহমান মন্ডল জানান,পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীর, মাদারগঞ্জ ও পীরগঞ্জ ফাজিল এবং জাফরপাড়া কামিল মাদ্্রাসা জামাত শিবির অধ্যুষিত বিধায় শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণে তাদের অনীহা রয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে ধর্মপ্রাণ মানুষের দানকৃত একরের পর একর সম্পত্তি রয়েছে। তবে ২০০৮ সালের তৎকালীন এমপি অনেকটা কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে জাফরপাড়া কামিল মাদ্্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। পাহাড়পুর আদিবাসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম জানান, সরকারি বরাদ্দ স্লিপ -এর প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে পর্যায়ক্রমে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করি। এতে স্কুলের কোমলমতি শিশুগুলো আনন্দিত। সেখানে প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বারুদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদুজ্জামান নোমান জানান, প্রতিষ্ঠানের অনেক সংস্কার কাজ বাকী ছিল। এদিকে ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন থাকায় স্থান সংকুলানে শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি জমি ক্রয় করা হয়েছে। এখন শহীদ মিনার নির্মাণ হবে। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু জাহের মো: সাইফুর রহমান জানান,সরকারি ও স্থানীয় বরাদ্দের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকিতে উপজেলার ২৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য ১৩০টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমুহে শহীদ মিনার নির্মাণে নির্দেশনা দিয়ে আসলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আন্তরিকতাকে দায়ী করেন তিনি। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর আগে রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহে পর্যায় ক্রমে ভবন নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো: ত্বকী ফয়সাল তালুকদার বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন প্রকল্প আসে,যেগুলো থেকে তারা শহিদ মিনার তৈরি করতে পারে, কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা মাদ্্রাসাগুলোর ওই পরিমাণ সরকারি বাজেট বা আর্থিক সক্ষমতা নেই, বিধায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই। এমতাবস্থায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহিদ মিনার তৈরির জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং এ প্রেক্ষিতে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মিত হচ্ছে।