ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আবদুল মালেকের উদ্যোগ অর্থায়ন ও কিছু মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়েছে এক কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক। শতাধিক বছরের আইল সড়কে পরিণত হওয়ায় দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে সহ¯্রাধিক কৃষকের। যোগাযোগ সহজ ও আরামদায়ক হয়েছে ৮-১০ গ্রামের মানুষের। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে দু’পাশে ফসলি মাঠের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে সড়কটি। সরজমিনে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িউড়া-কালিকচ্ছ সড়কের কাটানিশার গ্রাম থেকে ফসলি মাঠের মাঝ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার আইল পূর্বপাড়ায় শেষ হয়েছে। শতাধিক বছর ধরে ওই আইল দিয়েই দূর্ভোগে চলছে সেখানকার ৮-১০ গ্রামের সহ¯্রাধিক কৃষক ও সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি এই কষ্ট ও দূর্ভোগের কথা গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক আবদুল মালেককে জানান তারা। এগিয়ে আসেন মালেক। আচরণ ব্যবহার আর ভালবাসা দিয়ে আইলের দু’পাশের মানুষকে ম্যানেজ করেন। আইলের পাশের গাছ ও ডালপালা কেটে সড়কটির প্রস্থ বৃদ্ধি করেন। গত ৬ মাস আগে থেকেই তিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সড়কে মাটি ফেলতে শুরূ করেন। দীর্ঘ চার মাস পরিশ্রমের পর সড়কের অবস্থান ও প্রস্থ দৃশ্যমান হয়। গত দুই মাস ধরে দৈনিক ৬০-৭০ জন শ্রমিক সড়কে মাটি ফেলছেন। শ্রমিকদের মুজুরি দিচ্ছেন মালেক। জেলা শহর থেকে নিজের হোটেলের খাবার এনে শ্রমিক ও গ্রামের লোকজনকে খাওয়াচ্ছেন তিনি। কোঁদাল হাতে মালেক নিজেও মাটি কেটেছেন নিয়মিত। সড়কটি হচ্ছে দেখে আনন্দে স্বেচ্ছায় মাটি কাটার কাজে অংশগ্রহণ করেন গ্রামের কিছু লোক। তারা কখনো শ্রমিকদের সাথে কখনো সন্ধ্যার পর মাটি কেটেছেন। এখন মনপ্রাণ খুলে হেঁসে খেলে ১২-১৫ প্রস্থের ওই সড়ক দিয়ে হাঁটছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষক হোসেন আলী (৫৫), বকুল মিয়া (৬০), মো. বজলু মিয়া (৬৫), মো. মনির (৩৭) ও নূর আলমসহ অনেকেই বলেন, শতাধিক বছর ধরে একটি আইল দিয়ে কৃষি কাজের মালামাল বহন ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। রোগী, নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরা ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতেন। পূর্বপাড়ায় ও আইলের পাশের বাড়ির বিয়ে-শাদী সহজে হতো না। মালেক মিয়া এই সড়কটি করে আমাদের শতশত বছরের কষ্ট দূর করলেন। আনন্দে আমরাও স্বেচ্ছায় মাটি কেটেছি। এখন সহজেই কৃষি কাজের মালামাল বহন করা যাবে। জমির ফসলও সহজে বাড়ি নেয়া যাবে। চেয়ারম্যান মেম্বার এতদিন যা করতে পারেননি। মালেক তা করেছেন। আমরা মালেকের জন্য দোয়া করি। ব্যবসায়ি ও সামজসেবক আবদুল মালেক বলেন, বৃষ্টির সময় কৃষক, নারী পুরূষ সকলেই জুতা হাতে পা টিপে সড়ক নামের আইল দিয়ে চলার কষ্ট দেখেছি। শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধ মানুষদের পড়ে কাপড় নষ্ট হতে দেখেছি। এই সমস্যা গুলো আমাকে বারবার পীড়া দিয়েছে। তাই নিজ থেকেই উদ্যোগ গ্রহন করেছি। নিজ হাতে মাটি কেটেছি। কারণ মানবসেবার চেয়ে বড় কিছু নেই। আমাকে সহযোগিতা করেছেন গ্রামবাসী। সড়কের পাশের ফসলি জমি, মোরগের ফার্ম থেকে মাটি দিয়েছেন। সড়কটি নির্মাণ করতে আমার প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। আমার কোন আক্ষেপ নেই। শতাধিক বছর পর গ্রামের কৃষকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ স্বাচ্ছন্দে হাঁটছে হাঁসছে। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগ অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে এমন জনহিতকর কাজ অবশ্যই সমাজ/দেশের জন্য আশাব্যাঞ্জক। এমনসব কাজে আমরা মানুষকে উৎসাহিত করি। তবে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ বা ঝামেলা যেন না হয় সেই দিকেও সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।