রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কেল্লাবারুইপাড়া জামে মসজিদের ইমামকে প্রাণনাশ ও এলাকা ছাড়ার হুমকি প্রদান করেছেন দুই কাউন্সিলর। এই ঘটনায় ইমাম মাও, জসিম বিন সমীর বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারী) জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন। জিডি নং ১১৮৭।মূল হুমকি দাতা হলেন ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে যোগ দেয় ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম। ইমাম মাও. জসিম বিন সমীর বলেন, আমি প্রায় ২ বছর যাবৎ এই মসজিদে ইমামতির চাকুরী করে আসছি। আমি জুম্মার নামাজের বয়ানের সময় ঘুষ, সুদ সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়েকুরআন হাদিসের আলোকে বয়ান দিয়ে আসছিলাম। এই নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আমাদের কেল্লাবারুইপাড়া জামে মসজিদের ইমামেরে সাথে কমিটির দূরত্ব তৈরী হয়। এরপর কমিটি আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অভিযোগ তুলে যা ভিত্তিহীন। প্রায় দেড় মাস আগে কমিটির গুটি কয়েক সদস্য নিয়ে হঠাৎ করে ইমাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মসজিদের অধিকাংশ মসুল্লি এর বিরোধীতা করে। কমিটি এক পাক্ষিক ভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কথা বললে মুসল্লিরা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমার মুখের কথা শুনতে চাই। আমি দুইদফা কথা বলতে গেলে কমিটির লোকজন কথা বলতে বাঁধা প্রদান করে। এতে করে দুটি পক্ষ তৈরী হয়। এরপর আমি নিয়মিত নামাজ পড়িয়ে আসছিলাম। এর রেশ ধরে মসজিদে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে যায়। মোবাইল ফোনে কথা বলে দুই কাউন্সিলর আমাকে হুমকি দেওয়ায় আইনের প্রতিশ্রদ্ধাশীল হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি জিডি দায়ের করেছি। জানা গেছে, এসব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মসজিদ কমিটির গুটি কয়েকজন ও মুসল্লিরা গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলামের নিকট একাধিকবার যোগাযোগ করেন এবং ইউএনও সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে সমাধানের কথা উভয় পক্ষকে বলেন। এরইমধ্যে মসজিদ কমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অমান্য করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী কমিটি কর্তৃক মসজিদের ইমামকে গোদাগাড়ী পৌর সভার ৫ নং ওয়ার্ড কাইন্সিলর শহিদুল ইসলাম ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম থানা পুলিশকে প্রভাবিত করে থানায় ডেকে হেরোইন দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জোর পূর্বক বেতন ভাতা বুঝিয়ে পেয়েছি ও ইমামতি করবো না বলে স্বাক্ষর করে নেয়। গোদাগাড়ী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মাহবুব উপস্থিত থেকে এসব কাজ করান। এগুলো মসজিদের মুসল্লিরা জানতে পেরে পরিস্থিতি উপ্তত্ত হতে থাকে। এসব কিছু উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়। এরপর দুই কাউন্সিলার ক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। গত ২১ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুর ১২ টা ৫১ মিনিটে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নং থেকে মসজিদের ইমামের মোবাইল নং এ কল দিয়ে প্রণনাশের হুমকি দিয়ে বলেন, আজকের সন্ধ্যার মধ্যে এলাকা ছাড়বি নইলে আমার লোকজনসহ এলাকাছাড়া করবো। তোর কোন বাপ আছে আর ছাড়ায় তা দেখবো। যদি এলাকা না ছাড়িস তাহলে আমি ও আমার লোকজন দিয়ে মারধর করে এলাকা ছাড়া করবো বলে হুমকি প্রদান করে ও অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে। তার আগে ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম একই নং থেকে কথা বলে ইমামকে হুমকি স্বরুপ কথাবার্তা বলে। এসব হুমকির কথা ইমাম সমির বীন সমির রেকর্ড করে রাখে। যা পরবর্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ইমামকে অশ্লীন ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ায় মিশ্রপ্রতিক্রীয়া সৃষ্টি হয়। এই সময় ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মসজিদ কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যর নাম উচ্চারণ করে বলেন তারা তোকে বাঁচাতে পারবে না। এই নিয়ে বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি খুব উপ্তপ্ত বিরাজ করছে। যেকোন সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আবদুল মতিন বলেন, হুমকি দেওয়ার রেকর্ড আমি পেয়েছি। আমি তাদের থানায় ডেকে জিডি করতে বলায় মসজিদের ইমাম ও মসজিদ কমিটির প্রাক্তন এক সদস্য বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারী) রাতে জিডি করে গেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন এই কর্মকর্তা।