রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আখ চাষিরা চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ উপজেলায় আখ চাষে মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উপজেলার খালাশপীর, বড় আলমপুর, বড় ফলিয়া ও বাবনপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গুড় তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি আখ চাষি নিজেদের জমিতে কমবেশি আখের চাষ করে এবং তাদের আবাদি আখ থেকে গুড় তৈরি করে নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। শীত মৌসুমের শুরু থেকেই নিজেদের আবাদ করা আখগুলো মাড়াই ও গুড় তৈরির কাজ শুরু করেন। আখ চাষে লোকসান নয়, মুনাফার পরিমানই বেশি থাকে। গুড় তৈরি ও উৎপাদন কাজে এখানকার ইক্ষু চাষিরা অনেক এগিয়ে রয়েছেন। সবসময় ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করলেও অনেকেই আলু আটাসহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য মিশিয়ে নিয়ে গুড় তৈরী করেন। বাহিরাগত অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে গুড় কিনে মজুদ করে। মজুদকৃত গুড় মাটির তৈরি মটকা,মাটির পাতিল এবং হান্ডিতে মজুদ করে মুল্য বৃদ্ধির অপেক্ষায় থাকেন এবং বছরব্যাপী বিক্রি করেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়,উপজেলায় চলদি মওসুমে ৩’শ ২০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। মওসুমের শুরুতেই কিছু কিছু আখচাষী চিনি কলে আখ বিক্রি করেন অবশিষ্ট চাষীরা আখ মাড়াই ও গুড় তৈরি করেন। কয়েকটি গুড় তৈরির পরিদর্শনে কথা হয় হোসেনপুর গ্রামের রফিকুল ইমলামের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন-লাখ টাকা ব্যায় করে আখ মাড়াই ও গুড় তৈরি সামগ্রী কিনে নিজের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। নিজেদের জমির আখ থেকে গুড় তৈরির পাশাপাশি এলাকার চাষিদেরও গুড় তৈরি করে। ১ টিন আখের রস বাবদ তিনি কুড়ি টাকা দরে ক্রয় করেন চাষিদের কাছ থেকে। গুড় মাড়াই মৌসুমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা প্রতিদিন আসে তাদের এই গুড় তৈরির কারখানা থেকে। বড় আলমপুর এলাকার আখ চাষি সুজন মিয়া, রবিউল ও আরমান মিয়া জানান, এই এলাকা অনেক দিন থেকেই আখ চাষের জনপ্রিয় এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। রংপুর চিনিকলের অবস্থা কাহিল হবার কারণে এলাকার চাষিরাও অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। সময়মতো সুগার মিল কর্তৃপক্ষ আখ ক্রয় না করায় এবং আখ বিক্রির টাকা সময়মতো না পাওয়ায় অনেকেই আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ইক্ষু চাষি এলাকায় চিনির চেয়ে গুড়ের বেশি চাহিদা রয়েছে। চাষিদের বাড়ি বাড়ি এবং আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি তৈরি হয় গুড়ের তৈরী নানান ধরনের মুখরোচক খাবার। যে কারণে এ এলাকার জনপ্রিয় হয়ে উঠে গুড়। আর গুড় উৎপাদনের জন্য প্রায় চাষিরা কমবেশি জমিতে আখ চাষ করে থাকেন। আখ থেকে গুড় তৈরী করা হলে গুড়ের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ উত্তম জ¦ালানিও পাওয়া যায়। সারা বছর প্রতিটি বাড়িতেই জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয় আখের উচ্ছিষ্টাংশ। এছাড়াও এখানকার আখ চাষিরা বলছেন,এলাকার চাষিরা সকলেই ভালো কারিগর। যে কারণে এখানে ভালো মানের আখের গুড় তৈরি হয়ে থাকে। আখের জমির পাশেই চুল্লি বসিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এ গুড়ে সাধারনত কোন ভেজাল থাকে না। চিনি ও গুড়ের বাজার সমান হলে গুড়ে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করা হতো অধিকাংশ কারখানাগুলোতে। বর্তমানে চিনির দাম বেশী হওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। যার ফলে বর্তমানে প্রকৃত আখের রস থেকেই গুড় তৈরি করা হচ্ছে কারখানাগুলোতে। এতে গুড়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সবমিলিয়ে আখচাষ বর্তমানে অনেক লাভজনক ফসল।