রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে বুদ্ধিজীবী ও ভাষা সৈনিক আবদুস সাত্তার এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ রাস বিহারী চৌধুরীর নামে পৃথক দুটি স্বরনীয় সড়ক উদ্বোধন করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টায় আড়ানী পৌরসভার আয়োজনে সড়কের নাম ফলক উম্মোচন করা হয়। জানা যায়, আবদুস সাত্তার ১৯২১ সালে রাজশাহী হেতেম খাঁন চৌধুরী পুকুর পাড়ে জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে সব পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন তিনি। কিন্তু পিতা জিয়াউর রহমানের জন্ম ভূমি ছিল বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের ভারালীপাড়া গ্রামে। শৈশবে তিনি মাতৃহারা হন। শিুশুকালে আত্নীয়রা তাকে প্রথমে রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। কিন্তু আবদুস সাত্তারের ইংরেজিতে প্রচন্ড ঝুঁক ছিল। তাই তিনি নিজেই রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি ১৯৩৮ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক, ১৯৪০ সালে আইএ এবং ১৯৪৩ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর তিনি জলপাইগুড়ির জুয়ার্ডে চা বাগানের ম্যানেজার পদে চাকরি শুরু করেন। ছোট কাল থেকে ছিলেন তিনি প্রতিবাদী। এ সময় তিনি শ্রমিকদের নানা সমস্যার কথা মালিকের কাছে তুলে ধরেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পূর্বকালে মালিক পক্ষের লোকজন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে, মর্মে বুঝতে পেরে ১৯৪৯ সালে চাকরি ছেড়ে রাজশাহীতে চলে আসেন। এরপর তিনি কিছুদিন ছিলেন বেকার। এরমধ্যে শুরু হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই ভাষা আন্দোলনে তার ছিল সক্রীয় ভূমিকা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভুমন মোহন পার্কে অন্যায়, অবিচার ও অনিয়মের প্রতিবাদ বিশাল জনসভায় বলিষ্ঠকন্ঠে বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি গ্রেফতার হন। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি ১৯৫৩ সালে আড়ানী মনোমোহীনি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর আড়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের কোয়াটারে বসবাস শুরু করেন। তবে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তার সক্রীয় ভূমিকা ছিল। তিনি ১৯৫৮ সালে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সামাজিক শাসন বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তার ছিল অগ্রনী ভূমিকা। এরমধ্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তখন তিনি বয়সের ভারে নিজ বাড়ি থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বার্ধক্য জনিত কারনে তিনি ১৯৭২ সালের ২৩ অক্টোবর শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। তার ১০ সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে ৪ ছেলে ও ৬ মেয়ে রয়েছে। তার সন্তানরাও বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক কাজে লিপ্ত রয়েছেন। আবদুস সাত্তারের কর্মময় জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সমগ্র রাজশাহীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে আছে তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাত্র-ছাত্রী। অপর দিকে উপজেলার আড়ানী পৌরসভার দশআনি ঋষিপাড়া মহল্লার রাস বিহারী চেীধুরী ১৯৭১ সালে ১ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন। তার পরিবারকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ২০ নভেম্বর আত্নার মাগফেরাত কামনা করে একটি পত্র দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে লিখিত প্রেরিত পত্র সংরক্ষিত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা পত্র নিয়ে এই পরিবার বিভিন্নস্থানে ধরনা দিয়েও আজও স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারী এলেই শ্রদ্ধা, ফুল আর গানে গানে এ পরিবারকে স্থানীয়ভাবে স্মরন করা হয়। তাই স্থানীয়ভাবে স্বরণ করতে স্থানীয় এমপি দুই ব্যক্তির নামে আড়ানী এলাকায় দুটি স্বরনীয় সড়ক উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলীসহ দুটি পরিবারের সকল সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।