কিশোর-তরম্নণদের এভাবে বখে যাওয়া, দলাদলি, গ্রম্নপিং-লবিং, পাড়া-মহলস্নায় আধিপত্য বিস্তার, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা ইত্যাদিকে বলা হয় 'গ্যাং কালচার।' আইনের পরিভাষায় জুভেনাইল সাবকালচার। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কিশোর অপরাধ বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ময সীমা অতিক্রম করেছে। গ্যাং কালচারের এই বিস্তার দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ হুমকি। রাজধানীসহ সারা দেশের গুরম্নত্বপূর্ণ শহরগুলোতে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিপথগামী কিশোররা এলাকায় মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, চাঁদাবাজি এমনকি হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল নারায়ণগঞ্জের ফতুলস্না ও ভোলার দৌলতখানে কিশোর গ্যাং গ্রম্নপের হামলায় দুই জন নিহত হয়েছে। এ কিশোর গ্যাং গ্রম্নপগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে শতাধিক গডফাদার। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা যায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অংশে অন্তত ৮০টি কিশোর গ্যাং তৎপরতা চালাচ্ছে। এসব গ্যাংয়ের প্রতিটিতে রয়েছে ১০ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত সদস্য। গ্যাংগুলো শুধু চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মতো সাধারণ কাজ করে না, তারা এমনকি হত্যাকান্ডেও অংশ নেয়। গত বছর রাজধানী ঢাকায় সংঘটিত ২৫টি হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল কোনো না কোনো কিশোর গ্যাং। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্র মতে দেখা যায় কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা কাউন্সিলররা জড়িত আছে। তারাই কিশোর গ্যাংয়ের লালন-পালন ও সুরক্ষা করছে। যাকিনা খুবই উদ্বেগজনক। কিশোর গাং এর কারণ হিসেবে দেখা যায় অভাব, দার্দ্রিয ও বেকারত্ব। বেশীরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আসে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। এসব পরিবারের সন্তানেরা নিরম্নপায় হয়ে জড়িয়ে পড়ে গ্যাং কর্মকান্ডে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবেও তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। আর একবার কিশোর গ্যাং তৈরি হয়ে পড়লে তখন আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতা প্রদর্শনের অংশ থেকেই এর ডালপালা বাড়তে থাকে। তাই এখনি রম্নখে দাড়াতে হবে এই গ্যাং কালচারের বিরম্নদ্ধে। কিশোর অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক সদিচ্ছাই কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সংশোধনের সুযোগ রেখে আইন প্রয়োগ, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধকরণ, সামাজিক অনুশাসনের পরিধি বৃদ্ধি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে বাড়াতে হবে। পুলিশি অভিযানে শুধু কিশোর অপরাধীদের গ্রেফতার করলেই হবে না, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারদেরও গ্রেফতার করতে হবে। শুধু আইনের আওতায় এনে কিশোর অপরাধ দমন সম্ভব নয়। এ জন্য বাড়াতে হবে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা।