যমুনার রুই মাছের জিনোম আবিস্কার করে সাড়া ফেলেছেন-জামালপুরের মেলান্দহ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রধান গবেষক এবং বিশ^বিদ্যালয় গবেষণা সেলের পরিচালক ড. মাহমুদুল হাছান এই আবিস্কারের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। যমুনা নদী কেন্দ্রিক এটিই কোন প্রথম এবং পৃথক গবেষণা কর্ম। তাঁর সাথে যোগদেন জাপানি গবেষক আৎসুচি কুরাইশি, ইন্ডিয়ান গবেষক অর্পিতা ঘোষ। গবেষণায় ল্যাবসহায়তা করেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান অনিক, ছোঁয়া ইসলাম, ইফতেখার ইসলাম তুষার। ২০২২ সালের শুরুতেই গবেষণা কাজে মনোনিবেশ করেন মি. মাহমুদুল হাছান। এর আগে ৪টি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিস্কার করে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি পান। বর্তমানে তিনি দু’মুখো অন্ধ সাপ, সামুদ্রিক সাপ এবং ব্যাঙ নিয়েও গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে শেরপুর ফরেস্ট, লাউয়া ছড়া উদ্যান, সিলেট খাদিমনগর পার্ক এরিয়ায় ব্যাঙ এবং বান্দারবান-কক্সবাজার জোনের সামুদ্রিক সাপ নিয়ে গবেষণা। তিনি চরাঞ্চলের জীবনমানোন্নয়নেও কাজ করছেন। ২০১২ সালে তিনি জাপানের হিরোশিমা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি অর্জন শেষে পোস্টডক এবং হিরোশিমা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। দেশের টানে তিনি বশেফমুবিপ্রবিতে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। জামালপুর কেন্দ্রিক বিশ^বিদ্যালয়টি কিভাবে মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে ভাবনা থেকেই স্থানীয় সম্পদ হিসেবে তিনি যমুনার মাছ নিয়ে গবেষণার কথা নতুন করে ভাবতে থাকেন। একপর্যায়ে পাটের জীন আবিস্কারের ভাবনা থেকেই যমুনার রুই মাছ নিয়ে গবেষণার চিন্তা করেন। তিনি জানান-মানবদেহের খাদ্য-পুষ্টি এবং জনকল্যাণে রুই মাছের বহুমাত্রিক ব্যবহারের লক্ষ্য অর্জনের কথা মাথায় রেখে সফলতার এটি প্রাথমিক ধাপ। গবেষণায় দেখা গেছে, জীনগতভাবে হালদা-পদ্মা বা অন্যান্য স্থানের তুলনায় যমুনার রুই মাছের আলাদা বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা গেছে। স্বাদও আলাদা। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও পৃথক মনে হয়েছে। রুই মাছের পুষ্টি, গুণগতমানসহ আরো কিছু দিক গবেষণার প্রয়োজন আছে। বাকি ধাপগুলো শেষ হলে যমুনার বাঘাইর মাছের উপর গবেষণার ইচ্ছা আছে। এই আবিস্কার যমুনার রুই মাছের উন্নত জাত সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রজনন বৃদ্ধি, বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখার ইঙ্গিত বহণ করে। জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে এই গবেষণার কাজ সম্পন্ন করা হয়। জিনোম সিকোয়েন্স হলো-জীব বৈশিষ্ট্যের জেনেটিক (ডিএনএ কোড) পর্যায় বা বিন্যাসের স্তর। অর্থাৎ জীবের বিকাশ-গঠনের নির্দেশক। গবেষণার কাজের প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে মি. মাহমুদুল বলেন-সুপার কম্পিউটার এবং বায়োলজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট সংকট ফিল করা হয়। যার জন্য মাছ আহরণের পর ডিএনও টেস্টসহ আনুসাঙ্গিক পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য ভারত-জাপানের সহায়তা নিতে হয়েছে। এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়েরও দরকার। গবেষণকালে তাঁর টিম যমুনার জীবন কষ্টও উপলব্ধি করেছেন। এই সফলতার জন্য পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন এবং জাগরণী যশোর আর্থিক সহায়তা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ভিসি প্রফেসর ড. কামরুল আলম খানের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।