দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আলস্নাহ তাআলা ফরজ করেছেন। যে যেখানেই এবং যে অবস্থাতে থাকুক্ত নামাজ অবশ্যই আদায় করতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে কিংবা যানবাহনে থাকলে, তার নামাজেরও সুরত ও পদ্ধতি রয়েছে। আগের নবীদের যুগেও নামাজের বিধান ছিল। তবে পদ্ধতিগতভাবে পার্থক্য ছিল। কিন্তু তাদের পরবর্তীতে লোকেরা নামাজের ব্যাপারে অবহেলা শুরম্ন করে। অথচ ফরজ নামাজ আদায় না করা ভয়াবহ গোনাহের কাজ। আর এর কঠিন পরিণতি হলো- চিরদুঃখের ও কষ্টের জাহান্নাম।
বেনামাজিরা যে জাহান্নামে যাবে
আলস্নাহ তাআলা বলেন, 'নবী ও হেদায়েতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা 'গাই' নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের জুলুম করা হবে না।' (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৫৯-৬০) কোরআনে কারিমের অন্য আয়াতে এসেছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হব্তে 'কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদের খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে (কেয়ামত) অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃতু্য এসে গেল।' (সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ৩৮-৪৭)
নামাজ ছেড়ে দেওয়া কাফের হওয়ার মতো
আলস্নাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল (কাফেরের মতো কাজ করল)।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮২) অন্য হাদিসে আলস্নাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।' (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২১) নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি বাহ্যিক নিদর্শন। ঈমানের পর ইসলামের সবচেয়ে বড় হুকুম। আর নামাজ ছেড়ে দিল্তে মুসলিমের থেকে ইসলামের বড় কিছু ছুটে যায়। তাই উমর (রা.) বলতেন, 'নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের।' (বায়হাকি, হাদিস : ১৫৫৯, ৬২৯১) এছাড়াও ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলি (রা.) বলেন, 'যে নামাজ পড়ে না সে কাফের।' (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১) আবদুলস্নাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, 'যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।' (বায়হাকি, হাদিস : ৬২৯১) তারা প্রত্যেকে নামাজ না পড়ার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উলেস্নখ করেছেন। তারা বলতে চেয়েছেন যে, নামাজ পরিত্যাগ করা কাফেরদের কাজ। যে মুসলমান নামাজ পড়ল না্ত সে যেন কাফেরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কাজ করল। আলস্নাহর জিম্মাদারি বেরিয়ে যাওয়া ও সবকিছু হারানো ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ছেড়ে দিলে মহান আলস্নাহ ওই ব্যক্তির ওপর থেকে তার জিম্মাদারি বা রক্ষণাবেক্ষণ তুলে নেন। মুআজ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে দশটি নসিহত করেন, তার মধ্যে বিশেষ একটি এটাও যে তুমি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করল তার ওপর আলস্নাহতায়ালার কোনো জিম্মাদারি থাকল না।' (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৫/২৩৮) নামাজ না পড়লে ইহকালেও বহু ক্ষতি সাধিত হয়। বুরাইদা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি আসরের নামাজ পরিত্যাগ করল্ত তার সব আমল বরবাদ হয়ে গেল।' (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৩, ৫৯৪) আবদুলস্নাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আলস্নাহর রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে গেল তার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদের যেন বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।' (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫২)