সদ্যঃসমাপ্ত বিপিএলে পারফরম্যান্সে কারা এগিয়ে ছিলেন? দেশি নাকি বিদেশি ক্রিকেটাররা? শুক্রবার রাতের ফাইনালে হারার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের টানা উপসংহার দেশিদের পক্ষেই গেছে। বিদেশিদের বিষয়ে অসন্তুষ্টই শুনিয়েছে তাঁর কণ্ঠ, ‘আমাদের বিদেশিরা সেভাবে পারফর্ম করতে পারেনি। যেমনটি আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটি পাইনি। এর প্রভাব তো কিছুটা পড়েছেই। তাঁদের মধ্য থেকে এক-দুজন পারফর্ম করলেও কিন্তু ভালো হতো।’ বিদেশিদের নিয়ে হতাশা থাকলেও দেশিদের নিয়ে আবার ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি, ‘স্থানীয়দের নিয়ে আমি খুশি। জেতার জন্য ওদের যে মন-মানসিকতা, সেটি ঠিক ছিল। এই ইতিবাচক দিকটি নেওয়া যায়।’ চারবারের চ্যাম্পিয়ন দলের কোচের নিজ দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় লুকিয়ে আছে এবার কুমিল্লার শিরোপার নাগাল না পাওয়ার কারণ। তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের কথাই ধরুন। দেশিদের পাশাপাশি কাইল মায়ার্সের মতো ভিনদেশিরাও দলের শিরোপা জয়ের মধ্যমণি হতে পেরেছেন। তাই কোনো দলে যেমন স্থানীয় ও বাইরের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নিয়ে তর্কের সুযোগ আছে, তেমনি কোনো দলে সে আলোচনা তোলারই সুযোগ নেই। তবে কোচদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেশি-বিদেশিতে বিভেদ করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিপিএলের দশম আসরের সাত ফ্র্যাঞ্চাইজিই খেলতে নেমেছিল দেশি কোচের অধীনে। বরিশাল অবশ্য টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে পুরো আসরের জন্যই উড়িয়ে এনেছিল বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ ডেভ হোয়াটমোরকে। তবে হেড কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন স্থানীয় মিজানুর রহমান। তাঁর মতোই বিপিএল পরীক্ষায় আরেক দফা উতরে গেছেন দ্বিতীয়বারের মতো রংপুর রাইডার্সের কোচের দায়িত্ব পালন করা সোহেল ইসলাম। প্লে-অফে খেলা আরেক দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ ছিলেন তুষার ইমরান। প্লে-অফে উঠতে না পারা গতবারের ফাইনালিস্ট সিলেট স্ট্রাইকার্সের রাজিন সালেহ থেকে শুরু করে দুর্দান্ত ঢাকার খালেদ মাহমুদ ও খুলনা টাইগার্সের তালহা জুবায়েরদের কারণে বিপিএলে যেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেরই (ডিপিএল) আবহ ছিল। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে এঁদেরই নানা দলের কোচের ভূমিকায় দেখা যায়। বিপিএলে প্রতিটি দলের কোচ হিসেবে স্থানীয়দেরই দেখা যাওয়ায় একটি বিষয় স্পষ্ট যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও তাঁদের প্রতি আস্থা বাড়ছে। সোহেল ইসলাম এখান থেকেই নিজেদের উন্নতির সিঁড়ি ভাঙতে দেখেছেন। কয়েক বছর আগেও বিদেশিদের মূল দায়িত্বে রেখে তাঁদের সহযোগী হিসেবে স্থানীয়দের নানাভাবে যুক্ত করার মানসিকতা ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। এখন সেটি বদলে যাওয়ার নেপথ্যে স্থানীয় কোচদের অবদানই দেখেন তিনি, ‘আমি বলব স্থানীয় কোচদের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। তাঁদের দিয়ে কাজের কাজ হয় বলেই এখন সব দলের দায়িত্বে দেশি কোচরা। এটি আমাদের সবার প্রাপ্তি।’ এই সুযোগে নিজেদের আরো শাণিত করে তোলা যাচ্ছে বলেও মত রংপুর রাইডার্সের কোচের, ‘আমার কথাই বলি। রংপুরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অধিনায়ক সাকিব ছিল। এখন নেতৃত্বে না থাকলেও বাবর আজম লম্বা সময় পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব করেছে। নিকোলাস পুরানও একটি আন্তর্জাতিক দলের অধিনায়ক। এঁরা একেকজন একেক রকমের খেলোয়াড়। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ, দলীয় পরিকল্পনা বুঝিয়ে সেভাবে পারফরম্যান্স বের করে নেওয়া থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন উইকেটে তাঁদের খেলার ধরন বদলানোর পরামর্শ দিয়ে সেগুলোর সুফল পাওয়া—ব্যক্তিগতভাবে কোচ হিসেবে এটিও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না আমার জন্য। এতে করে আমার নিজের প্রতি নিজের আস্থাও বেড়ে গেছে অনেকখানি। আমি নিশ্চিত যে অন্যান্য দলের কোচদেরও সেই আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়েছে।’