এমপিও ভূক্ত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হাজির আছেন ২ জন আর শিক্ষার্থীও হাজির আছে ২ জন। ইতোমধ্যে ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জন অবসরে, ৩ জন শিক্ষক গেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে প্রধান শিক্ষিকা তিনি তার ব্যক্তিগত কাজে ময়মনসিংহ আছেন। এমন একটি বাস্তব চিত্র দেখা যায় জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা মনিজা আবুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে। জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায় ডোয়াইল ইউনিয়নে চাপারকোনা গ্রামে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মনিজা আবুল বালিকা মাধ্যমিক বিদালয়। বিদ্যালযটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়দের পাড়া গ্রামের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম আবুল হোসেন । তিনি গ্রামের পিছিয়ে পড়া মেযেদেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কথা চিন্তা করে স্বামী স্ত্রীর যৌথ নামে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। বিদ্যালয়টি এমপিও ভূক্ত হওয়ার পর দীর্ঘদিন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও বর্তমানে অত্যন্ত লাজুক। সোমবার (০৪ মার্চ/২৪) বিদ্যালঢে দেখা যায়, ,ষষ্ঠ হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণি কক্ষই শিক্ষার্থী শূন্য। শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় ধুলাবালির স্তুপে ঢেকে আছে। অফিস কক্ষে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষক ২ জন কর্মচারীদের নিয়ে স্কুল মাঠে বসে বসে আড্ডা মারছে। এদিকে অফিস কক্ষে শিক্ষার্থী হাজির না থাকা সত্বেও শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায় সন্তোষজনক উপস্থিতি লিখে রাখা হয়েছে। আর এসব কর্মকাণ্ড দেখে শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। স্থানীয় ব্যক্তি হবি মিয়া বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের বাড়ির পাশেই । আমি দেখি প্রতিদিন এখানে লেখাপড়া হয় না। শিক্ষকরা শুধু আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী মাঝে মধ্যে আসলেও ঘন্টাখানেক পরই আবার চলে যায়। তাই আমাদের মেয়েকে এখানে ভর্তি না করে চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি। কলেজ ছাত্র সাকিব হাসান জানান, শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই আজ বিদ্যালয়টি ধ্বংসের পথে। কেন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেন না এবং ভর্তি হতে চান না। এটা শিক্ষকেরাই ভালো জানেন। তবে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য এবিষয়ে কখনো কোন শিক্ষকের মাঝে উদ্বেগ বা প্রচেষ্টা দেখতে পায়নি। এটা দুঃখজনক। বিদ্যালয়ের পাশে বাড়ী, হাছেন আলী বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা প্রতিদিন স্কুলে আসে আর চেয়ার নিয়ে মাঠে বসে পেপার পড়ে, গল্প করে। যদিও দুই চারজন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। তবুও তাদের ঠিকমতো ক্লাস নেয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা দুই এক ঘন্টা গল্প করে সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যায়। এই হচ্ছে বিদ্যালয়টির প্রতিকার্য দিবসের অবস্থা। বিদ্যালয়ে জমিদাতা মৃত খুশ মাহমুদ সরকারের ছেলে সরোয়ার আলম বলেন, আমরা এক বিঘা জমিদান করেছি এবং অনেক কষ্ট করে শ্রম ঘাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু আজ শিক্ষকদের অবহেলায় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের আজ বেহাল দশা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের পরিশ্রমটাই বৃথা। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে এই জন্য দায়ী করবো। তারা কেন সবকিছুই জেনে শুনে দেখে ব্যবস্থা নিলেন না। এছাড়াও একটি শিক্ষার্থী শূন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা কিভাবে বেতন ভাতা উত্তোলন করে। এটা কি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেখে না। বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আবু সাঈদ বলেন, ১৯৮৭ সনে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৭ সালে ১২ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর তিনজন শিক্ষক অবসরে যান। বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুবই অপ্রতুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় শিক্ষকদের মাঝে পাঠদানে অনিহা, অনিয়ম ও অনুপস্থিতি। প্রধান শিক্ষক এসব দেখেও না দেখার ভান করে তাদের প্রশ্রয় দেন এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কখনোই বিদ্যালয়ের কোন খোঁজখবর রাখেন না। তিনি কোন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন না। প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি দায়িত্বের অবহেলার কারণেই আজ প্রতিষ্ঠানটি বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম মানিক বলেন, বিদ্যালয়ের ভালোমন্দ দেখভালের দায়িত্ব কি শুধু ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নাকি শিক্ষকদেরও আছে। শিক্ষকরা যদি নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করান। সেটি দেখার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। এছাড়াও তিনি কখনোই আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। বিষয়টি আমি জানলাম এবং দেখবো। এ বিষয়ে চাপারকোনো মনিজা আবুল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজমেরী বেগম বলেন, আমি বিদ্যালয়ে নেই বলেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। তবে ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলো সত্য নয়। সহকারী শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন এবং পাঠদান করান। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। এটি উন্নত করার চেষ্টা চলছে। সরিষাবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা এটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি তারা এই অবস্থান থেকে নিজেদের উত্তোলন না করতে পারেন। তাহলে ঊর্ধ্বতনের সাথে কথা বলে তাদের এমপিও বাতিল করা হবে। এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি আমি শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে খতিয়ে দেখব এবং সত্যিকার অর্থেই যদি শিক্ষার্থী শূন্য হয় তাহলেই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।