বরিশাল রেস্তোরাঁ রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা অধিকাংশ রেস্তোরাঁর নেই ফায়ার লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। যেগুলোর আছে সেগুলোও নিয়ম মানছে না। অগ্নিনির্বাপণের শর্ত না মানলে রাজধানীর বেইলি রোডের মতো ট্র্যাজেডি নগরীতেও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।
এরমধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরীর রূপাতলী হাউজিং এলাকায় সুগার পেস্টি অ্যান্ড ডাইন রেস্তোরাঁয় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। ওইদিন অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বে থাকা একজন ফায়ারম্যান জানিয়েছেন, রেস্তোরাঁর ভেতর গ্যাস সিলিন্ডার ছিল পাঁচটি। কিন্তু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিলনা। তারা রেস্তোরাঁর মধ্যেই রান্না করে। পাশে চলে এসি ও ফ্যান। এ কারণেই অগ্নিকান্ড ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক সময় তারা রিজার্ভ পানি পান না। নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা কাঠপট্টি, চকবাজার, গির্জা মহল্লায় রাস্তার দুইপাশে যেভাবে দোকানগুলো বর্ধিত করেছে, তাতে গাড়িও প্রবেশ করতে পারেনা।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর আব্বাস উদ্দিন জানান, রেস্তোরাঁগুলোয় ফায়ার লাইসেন্সের শর্ত মানা হচ্ছেনা। উদাহরণ হিসেবে তিনি নগরীর রূপাতলীতে সুগার পেস্টি অ্যান্ড ডাইন রেস্তোরাঁর কথা বলেন। তবে কী পরিমাণ রেস্তোরাঁয় ফায়ার লাইসেন্স আছে তা তিনি বলতে চাননি।
সোমবার নগরীর সদর রোড, গির্জা মহল্লা, চকবাজার, কাটপট্টি, পুলিশ লাইনস, নবগ্রাম রোড, চৌমাথা, সিঅ্যান্ডবি রোড, রূপাতলী, নথুল্লাবাদের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশেরই ফায়ার এক্সিট বা জরুরি বহির্গমন পথ নেই। কোনো কোনো রেস্তোরাঁ আবার আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, রেস্তোরাঁগুলোতে বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডার থাকে। যেখানে বের হওয়ার পথ একটিই। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকায় এগুলো হলে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই। সম্প্রতি নগরীর গির্জা মহল্লায় কাচ্চি ডাইন নির্মাণ করা হয়েছে বাণিজ্যিক এলাকায়। তাদের এক্সিট পয়েন্টও নেই। রফিকুল আলম আরও বলেন, অগ্নিনির্বাপণ আইন না মানলে ফায়ার সার্ভিস কেন সেসব দোকান বন্ধ করে দেয় না? রাজধানীর বেইলি রোডের মতো ট্র্যাজেডি ঠেকাতে হলে বরিশাল নগর প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে। বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এএইচএম রাশেদ বলেন, রেস্তোরাঁ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দরকার। কিন্তু নগরীতে যেসব নতুন রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, সেগুলোর অধিকাংশেরই ছাড়পত্র নেই। যে কারণে পরিবেশ সম্মতভাবে এগুলো গড়ে উঠছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, বরিশাল নগরীতে অপরিকল্পিত অবকাঠামোয় যেসব রেস্তোরাঁ গড়ে উঠছে, সেগুলোর অর্ধেকেরই অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে। শর্তানুযায়ী ফায়ার লাইসেন্স নিলেও অধিকাংশ রেস্তোরাঁ নিয়ম মানছে না। এছাড়া নগরীর ৫০ শতাংশ রেস্তোরাঁর ফায়ার লাইসেন্স নেই। আড়ালে এসব রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠার কারণ ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা নগরীতে ফায়ার লাইসেন্স না থাকা দোকানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। পূর্ণরায় খুব শীঘ্রই আবার অভিযান পরিচালনা করা হবে।