সুন্দরবন উপকূলে কপোতাক্ষ নদের তীরে ঐতিহ্যবাহী মহা বারুণীমেলা আয়োজনে দীর্ঘদিন পর একাট্ট হয়েছে এ জনপদের মানুষ। খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা ফিরিয়ে আনতে সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান এর নির্দেশনায় প্রাণ ফিরে পেতে চলছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনির বারুণীমেলা। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় আলোচনায় প্রাণ ফিরেছে আয়োজকদের মধ্যে। বরাবরের ন্যায় কপিলেশ্বরী কালী মন্দিরের সভাপতি চম্পক কুমার পালকে সভাপতি কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়ার্দ্দার কে সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র ভদ্রকে কোষাধ্যক্ষ ও মাহমুদ আসলামকে মেলা কমিটির পরিচালক করে করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট বারুণীমেলা উদযাপন কমিটি গঠিত হয়েছে। পৃথক আরো অন্তত ১১টি উপ-কমিটি গঠনের কাজ চলছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দিন থেকে মেলার আয়োজনে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে আয়োজক গোষ্ঠী। এদিকে দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ পর কপিলমুনির ঐতিহ্যবাহী মহা বারুণীমেলা উদযাপনের খবরে চলছে সাজ সাজ রব। আয়োজকসহ সর্বসাধারণের মধ্যে চলছে উৎসবের আমেজ। ইতোমধ্যে মেলায় অংশ গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ শুরু করেছে সার্কাস, যাত্রাগাণ, যাদু প্রদর্শনী, পুতুল নাচসহ চিত্ত বিনোদনের নানা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। মেলা আয়োজক গোষ্ঠীর সভাপতি ও কপিলেশ্বরী কালী মন্দির কমিটির সভাপতি চম্পক কুমার পাল জানান, কপিলমুনি মহা বারুণী স্নানের ইতিহাস সুদীর্ঘ ও পৌরানিক কাহিনী নির্ভর। মেলার ইতিহাস উদ্বৃতি দিয়ে তিনি জানান, দ্বাপর যুগে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে পুন্ড্র নগরের অধিপতি বসুদেবের ছেলে বাসুদেবের বৈমাত্রেয় ভাই কপিলদেব কপোতাক্ষ নদের কালীবাড়ি ঘাটের বটবৃক্ষমূলে দীর্ঘ তপধ্যানে মগ্ন থেকে সিদ্ধিলাভের সময় থেকে এখানে বারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেবের সাথে বসুদেবের ছেলের বসচা ও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি অন্যদিকে বাসুদেবের শ্বশুর জরাসন্ধের পুন্ডুনগরের দখল নিতে বসুদেবকে হটাতে ১০০ নৃপতিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। সে লক্ষ্যে হত্যা যজ্ঞ শুরু করলে কপিল তা প্রতিরোধে সিদ্ধিলাভের আশায় বিভিন্ন স্থানে তপধ্যান শুরু করেন। একপর্যায়ে কপিলমুনির কালীবাড়ি ঘাটে তপধ্যানে তিনি সিদ্ধলাভ করেন। সেই থেকে তার শ্মরণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে কপোতাক্ষ নদে স্নানের মাধ্যমে বারুণী স্নানোৎসব পালন করে অসছে। মতান্তরে কথিত আছে বরুণ জলের দেবতা, আর বারুণী তার স্ত্রী। তার স্মরণে সনাতনীরা মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে বারুণী স্নান করে আসছে। তাদের বিশ্বাস, এই তিথিতে গঙ্গার জল এই স্থানে প্রবাহিত হয়। আর তখন এখানে স্নান করলে পাপমোচন ও পবিত্র হওয়া যায়। আর সেই থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূণ্য লাভের আশায় বারুণীস্নান করে আসছে। মেলার পরিচালক এম মাহমুদ আসলাম জানান, ২০১০ সালে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় যেকোন ধরনের মেলা বা বাণিজ্যিক আয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এরপর থেকে মেলা আয়োজনে শুরু হয় মাঠ শূণ্যতা। যদিও এরপর দু’একবার ভিন্ন এলাকায় মেলার আয়োজন হলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক সমন্বয়হীনতাসহ নানাবিধ সংকটে মেলার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র বারুণী স্নানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা। এভাবে প্রায় এক যুগেও মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এক প্রকার অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা। সর্বশেষ রাজনৈতিক পালাবদল, কপোতাক্ষ খননে নব্যতা ফিরে আসায় শুরু হয় জোয়ার-ভাটা। সর্বপরি মেলার অনুকূল পরিবেশ ফিরে আসায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফের নতুন করে শুরু হয়েছে বারুণী মেলার জোর প্রস্তুতি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের একদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে ঐতি্েহ্যর কপিলমুনি মহাবারুণী মেলা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে পর্বনপ্রিয় বাঙালির মাঝে বার বার ফিরে আসুক বারুণীমেলা, এমনটাই প্রত্যাশা জনপদের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের। পরিশেষে কপিলমুনি থেকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বারুণীমেলা অনুষ্ঠানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান ও খুলনা ডিসি, এসপি মহোদয় সহ সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।