বাংলাদেশ স্মার্ট হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে। টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ-স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য এগিয়ে চললেও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোন জেলা-উপজেলাতেই উল্লেখযোগ কোন স্থাপনার সামনে নেই ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিশে^র বিভিন্ন দেশ দেখার সুবাদে একথা স্পষ্ট করে বলতেই পারি যে, একটি আধুনিক এবং সভ্য শহরে, ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। অধিকাংশ দেশে, রাস্তার পাশেই এটি দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই বললেই চলে। দমকলের সাহায্য ছাড়াই, ছোট ও মাঝারি ধরনের অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা করে এই ফায়ার হাইড্রেন্ট। সাধারণত ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে যে পরিমাণ পানি থাকে, তা আগুন নেভানোর জন্য সবসময় যথেষ্ট নয়। যে কারণে, অগ্নিকান্ডের আশপাশে পানির ব্যবস্থা রাখতে হয়। কিন্তু এটি সংযুক্ত থাকে শহরের পানি সংরক্ষণাগারের সঙ্গে। বিশ্বের অধিকাংশ পরিকল্পিত শহরেই, এই ব্যবস্থা রয়েছে- যা থাকে সড়ক লাগোয়া। ঢাকা শহরের কয়টি রাস্তা বা মার্কেটে এই ব্যবস্থা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। যদিও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ও মার্কেটগুলোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই তেমন আগ্রহ নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে থাকা কিছু লোভি-অর্থ পাচারকারীরা অগ্নি নির্বাপনের জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ব্যবস্থা না করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সেই রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্মাণ করেছে ‘শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউট’। উন্নত বিশে^ স্বাস্থ্যসেবার চেয়ে, হাসপাতালের চেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় খাদ্য পুষ্টিকর ও কম দামে মানুষের ঘরে পৌছে দেয়ার উপর। আর বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল-অপুষ্টিকর খাদ্য-দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার মান নিন্মগামি করে কেবল কিছু হাসপাতালের অবকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও অগ্নিকাণ্ডরোধে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না ষড়যন্ত্রকারী একটি চক্রের নেপথ্য ষড়যন্ত্রের কারণে। তার উপর গত বছর ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট বসাবে কে’ শিরোনামের সংবাদটি বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, কোনো র্কর্তৃপক্ষই এর দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঠেলাঠেলিতেই প্রমাণ হয়- সরকার নির্দিষ্টভাবে কোনো কর্তৃপক্ষকেই এই দায়িত্ব দেয়নি। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই কোনো কর্তৃপক্ষ এর দায় নিতে চাইবে না। অগ্নিনির্বাপণে ঢাকায় পানির সবচেয়ে ভালো উৎস হতে পারে পুকুর ও জলাশয় সৃষ্টি করে। এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। এজন্য পাশাপাশি প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ স্থাপন করতে হবে। ঢাকা ওয়াসার হাতে যেহেতু পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব, সে কারণে এটা ঢাকায় ওয়াসা করলে বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এজন্য সরকারকে আন্তঃসংস্থার সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। ঢাকা ওয়াসা ফায়ার হাইড্রেন্ট করলেও এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে দুর্যোগ কমিটিকে তৎপর থাকতে হবে। কোনো রকম ভুল ব্যবস্থাপনা হলে সরকারের ব্যাপক পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে। কেননা, ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদনে প্রচুর খরচ হয়। ঢাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মূল নেতৃত্বে থাকবেন সিটি মেয়র এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে এ কাজ করতে হবে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে। দেশ যখন আগুনে পুড়ে যায়, মানুষ যখন একের পর এক প্রাণ হারায়; তখন ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব ঢাকাবাসীকে খাবার ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি সরবরাহ করা। ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার না। এটা ফায়ার সার্ভিস করবে। কেননা, আগুন নেভাতে তাদের পানির দরকার হয়। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসাকে যদি এটা করতে হয় তাহলে আমাদের টাকা দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিস যদি আমাদের টাকা দেয়, আমরা করে দেব। আর আমাদের পানি ব্যবহার করলেও টাকা দিতে হবে। কেননা, ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদনে অনেক টাকা খরচ হয়। আর সেসব পানি বিক্রি করে সমস্যার সমাধান করতে হয়। ঢাকায় ফায়ার হাইড্রেন্ট করতে প্রকল্প নিলে তো, হাজার হাজার কোটি টাকা লাগবে। এসব বিষয় সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। কিন্তু এটাও সত্য, সাধারণ মানুষের জীবন এবং জীবিকা বাঁচাতে চাইলে, হাজার কেন, লক্ষ কোটি টাকা খরচ করতে হবে সরকারকেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করবেন। দেশের মানুষকে আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ যেমন এই সরকারই দিয়েছে, তেমনি অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো আধুনিক ব্যবস্থার উদ্যোগ সরকারই গ্রহণ করবে- এটা আমাদের সহজ প্রত্যাশা। দেশের নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব সরকারেরই। ফায়ার হাইড্রেন্ট শহরের রাস্তা এবং মার্কেটে অবিলম্বে স্থাপিত হবে- এমন প্রত্যাশা করা মোটেও অমূলক হবে না! প্রত্যাশা থাকবে, আরেকটি বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার আগেই সরকারের সংশ্লিষ্ট র্কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর যেন মানুষকে নিঃস্ব হতে না হয়। একথা সত্য যে, ফায়ার সার্ভিসের কিছু অসাধু কর্তা আর রাজউকের কিছু কর্তার দুর্নীতির সুযোগে গড়ে ওঠা অবৈধ হোটেল, ভবন আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে রাজধানীতে একের পর এক ঘটছে অগ্নি দুর্ঘটনা। অধিকাংশ সময় পানি স্বল্পতার কারণে আগুন নেভাতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছেন ফায়ার ফাইটাররা। সরু রাস্তায় পানি বহনকারী গাড়ি প্রবেশ করতে না পারা, বাড়ির নিচে রিজার্ভ ট্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত পানি না থাকা এবং নগরীর বিভিন্ন স্থানে থাকা জলাধারগুলো ভরাট করে ভবন নির্মাণ করার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার সময় পানির সংকটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। তবে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। একটি পরিকল্পিত নগরীতে আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন রাস্তার ধারে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ বসানো থাকে। যা সরাসরি পানির পাম্পের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া থাকে এবং এতে পানির অতিরিক্ত প্রেসার দেওয়া থাকে। কোথায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পৌঁছামাত্রই হাইড্রেন্টের বাল্ব খুলে পানি ছিটানোর জন্য পাইপ লাগাবে আর সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে বেশি গতিতে পানি বেরিয়ে আসবে। যা দিয়ে সহজে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ঢাকা শহর পরিকল্পিতভাবে গড়ে না উঠলেও সরকার ও নগরের দায়িত্বশীলরা চাইলে পুরো ঢাকা শহরজুড়ে ‘স্ট্রিট হাইড্রেন্ট’ বসানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীলদের সদিচ্ছা। চারপাশে নদী বেষ্টিত ঢাকা শহরে পানির অভাবে আগুন নেভাতে না পারার মতো ঘটনাকে লজ্জাজনক। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১২ বছরে রাজধানীসহ সারাদেশে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ স্থাপন করার জন্য সিটি করপোরেশন ও ওয়াসাকে অনেক আগে থেকে সুপারিশ করে আসছি। সরকার চাইলে পুরো দেশে হাইড্রেন্ট বসানো সম্ভব। ফায়ার হাইড্রেন্টের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ‘পাম্পের পানি প্রেশার দেওয়া থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে হাইড্রেন্ট বসানো থাকবে। সেগুলোতে ডেলিভারি হুজ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে পানি সোর্স পাব। এবং সেই পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজটা দ্রুত করা যাবে।’
শহরজুড়ে স্ট্রিট হাইড্রেন্ট বসানোর শতভাগ সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে এটা নিশ্চিত। আমাদের এই ঢাকা শহরে স্ট্রিট হাইড্রেন্ট বসানোর শতভাগ পসিবিলিটি আছে। রাশিয়া- সৌদি আরব এমনকি রাজস্থানের মরুভূমিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো গেলে আমাদের এখানে কেন নয়? পৃথিবীর একমাত্র রাজধানী ঢাকা, যার চারপাশে নদী রয়েছে। আমরা পানি বেষ্টিত অবস্থায় থেকে পানির অভাবে আগুন নেভাতে পারি না, এর চেয়ে লজ্জাজনক অবস্থা আর কী হতে পারে? এটার উত্তর কে দিবে? এই ব্যর্থতা সরকারের, নির্বাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর, নীতি নির্ধারকদের, সংসদ সদস্যদের। বিষয়টা এরকম, তারা মেডিক্যাল বোর্ডে ডাক্তারদের পরিবর্তে আলু পটল ব্যবসায়ীদের বসিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে চান। যা কোনভাঊেন একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকের প্রত্যাশা হতে পারে না। সত্যিকথা বলতে গেলে বলা যায় যে, একটি স্মার্ট দেশের, স্মার্ট বা পরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে উঠলে জননিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি বিষয় সংযুক্ত থাকতো, যাতে ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা করা থাকতো। আমাদের পাশে কলকাতায় ব্রিটিশ আমল থেকে ফায়ার হাইড্রেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের এখানে নেই। গত ১৫-২০ বছর ধরে বলা হচ্ছে, ঢাকা শহরের চারপাশে নদী আছে, জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট করা হউক। এটা করা হলে যেখানে ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে পারে না, সরু গলি, সেখানেও পাম্প দিযে আগুন নেভানো সম্ভব। এগুলো তো বলা হচ্ছে। আমরা ফায়ার হাইড্রেন্টের বদলে নির্মাণ করি ফ্লাইওভার। যেসব এলাকা ডেভেলপমেন্ট হয়েছে, কিন্তু ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা রাখা হয়নি, সেসব স্থানে এখন করলেই হয়। আমাদের তো আগে ফ্লাইওভার ছিল না, এখন হচ্ছে না? হচ্ছে। তাহলে ফায়ার হাইড্রেন্টও বসানো কেন সম্ভব না? এমন প্রশ্ন সবার মত আমারও। পাশাপাশি বলতে চাই- একটি স্মার্ট দেশের, স্মার্ট রাজধানীর উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে কোনও রোগী বেশি অসুস্থ হলে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডে কি রোগীর স্বজনরা থাকেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা থাকেন? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বসে রোগ নির্ণয় ও করণীয় ঠিক করেন। আমাদের সড়কে দুর্ঘটনা দূর করা জন্য কৃষিমন্ত্রী বা নৌমন্ত্রী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন কেন? নগরের উন্নয়নের জন্য নীতি নির্ধারকরা সবচেয়ে ভালো মানুষদের দিয়ে তাদের কাজগুলো করাবেন। যতদিন একাজ করতে না পারবো ততদিন আমাদের এই দুরবস্থা শেষ হবে না। আজ যদি ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকতো, তহলে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে পানির সংকটে পড়তে হতো না, সর্বশেষ বেলী রোড ট্রাজেডিতে ৪৬ জন নিহত হতো না। পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় বড় আগুন লাগার ঘটনায় আমরা দেখি, আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ারের সদস্যরা পানির সংকটে পড়েন। কেন আমাদের এই সংকটে পড়তে হবে? ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকতে এই সংকটে পড়তে হতো না। যতদূর মনে আছে- পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ৭১ জন। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিযে পানির সংকটে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিভিন্ন বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। দূর থেকে পাইপ টেনে পানির ব্যবস্থাপনা করতে হয়েছিল। এছাড়া ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করেও পানি এনে আগুন নেভাতে দেখা গেছে। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডেও একই সমস্যা পরেছিলো ফায়ার সার্ভিস। আমাদের দেশের উন্নয়ন কাঠামোর অধিকাংশই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা। যেখানে অপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজধানী গড়ে ওঠে সেখানে ফায়ার হাইড্রেন্টের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো রাখা হয় না বা মানা হয় না। বনানীর মতো জায়গাকে অপরিকল্পিত বলা যাবে না। সেখানেও দেখা গেছে এই ভয়াবহতা- নেই ফায়ার হাইড্রেন্ট-এর ছিটেফাটাও। যে কারণে বনানী এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুনে ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানোর জন্য কোনও ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থাপনা ছিল না। শুধু তাই নয়, একটি বহুতল ভবনে জননিরাপত্তার জন্য যে যে ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন তার কোনোটিই এই ভবনে ছিল না বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। একথাও সত্য যে, রাজধানী ঢাকা হয়ে গেছে টাকা তৈরি কারখানা। যেখানে মানুষ, মানবিকতার জায়গা নেই। রাজধানীতে যে মানুষগুলো থাকে, তাদের নিরাপত্তা দেওয়াটা জরুরি। একটা মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সিটিতে যতটুকু প্রটেকটিভ মেজারস থাকে তার কোনওটাই সিটির দায়িত্বশীলরা পালন করছেন না। একারণে বারবার দুর্যোগ আসছে। তবে এটাই শেষ না। একটা মানুষের জীবনের মূল্য অনেক। সে জীবন রক্ষা করার জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে অনেক ছাড় দিতে হবে। অনেক কঠোর হতে হবে। কোনও নিয়মই সাধারণ মানুষ এমনিতে মানে না। তাকে মানাতে হয়। সমষ্টিগত ভালোর জন্য রাষ্ট্রকে সে জায়গাটা তৈরি করতে হয়। যেন তেন ভাবে করতে পারবেন না। এভাবে করতে হবে। নিয়ম মেনে করতে হবে। এই না বলার চর্চাটা কঠোরভাবে রাষ্ট্রকেই করতে হবে। সেই নিয়ম না মেনে একের পর এক নতুন নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে, বড় বড় দালান- কোঠা হচ্ছে, কিন্তু পথচারিদের হাটার জন্য ফুটপাত, অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচাতে ফায়ার হাইড্রেন্ট-এর ব্যবস্থা করছে না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে স্মার্ট দেশ, স্মার্ট রাজধানীকে প্রকৃত স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট’ স্থাপন করা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করুন-মানুষ বাঁচান... (মোমিন মেহেদী : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক পূর্বাভাস)