হাইড্রোলিক হর্ন হচ্ছে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী বিশেষ হর্ন যা ঢাকার শব্দ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের জন্য শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৪৫ ডেসিবল। এর চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ শব্দদূষণ হিসেবে বিবেচিত, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করলে তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মতে, ঢাকার কোনও কোনও ব্যস্ত সড়কে ৬০ থেকে ৮০ ডেসিবল শব্দ হয়। সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ মানুষকে সাময়িকভাবে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। হাইকোর্টের নির্দেশনায় যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এখনো উচ্চ শব্দের হর্ন বাজিয়ে ছুটছে যানবাহন। হর্ন বাজানোর ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না এলাকাভিত্তিক নির্দেশিকা। দেখা যায় প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে আইনত নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সকল প্রকার যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো হচ্ছে এবং প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তা বাজানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সামনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিষেধ, এই মর্মে সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও সেটা কেউ মানছে না। এমনকি নামাজের সময় ও মসজিদের সামনের রাস্তায় চালকরা অপ্রয়োজনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর আবাসিক ও ভিআইপি এলাকায় রাত ১০টা পর সব ধরণের হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর আদেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাবার সময় কোনো হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া কাকরাইল থেকে মগবাজার হয়ে ময়মনসিংহের দিকে যাবার রাস্তা এবং শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে গাবতলী সড়কে শব্দ নিয়ন্ত্রণে সার্ভিলেন্স টিম গঠন করে তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ছোট ছোট কারখানায় উৎপাদিত হাইড্রোলিক হর্ন উৎপাদন ও সস্তায় বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তারপরও থামছেনা এই হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা যায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সব উদ্যোগ কেবল মামলা ও জরিমানায়ই সীমাবদ্ধ। রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন জব্দ করে জরিমানা করা হলেও অধিকাংশ গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই হাইড্রোলিক হর্নের কারণে কানের সমস্যায় পড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হচ্ছে অনেকে। হাইড্রোলিক হর্ন শুধু কানের ক্ষতি করে তা নয় কানের পাশাপাশি মাথায়ও অনেক সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাইড্রোলিক হর্নের কারণে শিশুদের শ্রবণশক্তি অকেজো হয়ে যায়। তাই জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে সরকারকে এখনি নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ। উচ্চস্বরের এই হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন ভাবে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও চালকদেরও সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে এর আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। গাড়ি জব্দের পাশাপাশি জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি পরিবহন মালিক, চালকসহ সবাই সচেতন হলেই কেবল মাত্র এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে।