ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে রোকেয়া বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। উপজেলার বিশুতারা গ্রামে গত বুধবার দিবাগত রাতের যেকোন সময় এই হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা গ্রামের ফসলি মাঠের খাল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছেন সরাইল থানা পুলিশ। এই হত্যাকান্ডের কারণ ও খুনি চক্র সনাক্ত করতে মাঠে কাজ করছেন পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিশুতারা গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী রোকেয়া বেগম। ৩ ছেলের মধ্যে সবার ছোট আলতাফ হোসেনের (৩৭) স্ত্রী রশিদা বেগমের (৩১) সাথেই বসবাস করতেন রোকেয়া। বড় ছেলে রওশন আলী (৫৫) বসবাস করেন কালিকচ্ছে। মাঝেমধ্যে রোকেয়া রওশনের বাড়িতেও যেতেন। গত বুধবার দুপুরে শ্বাশুরিকে ঘরে রেখে পারিবারিক কাজে পাশের বাড়িতে যান রশিদা। কাজ শেষ করে এসে দেখেন শ্বাশুড়ি রোকেয়া ঘরে নেই। আশপাশের ঘরে ও বাড়িতে খুঁজে পাননি রোকেয়াকে। রশিদা ভাবেন কালিকচ্ছে বড় ছেলের বাসায় গিয়ে থাকতে পারেন। দিন যায়, রাত যায় রোকেয়ার সন্ধান মিলে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের লোকজন বলাবলি করে বাড়ি থেকে শতাধিক গজ দূরে গ্রামের ফসলি মাঠে পানি নিস্কাশনের খালে কাঁদায় পানিতে এক বৃদ্ধ মহিলার লাশ পড়ে আছে। স্বজনরা দৌড়ে গিয়ে রোকেয়ার লাশ সনাক্ত করেন। সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রোকেয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত রোকেয়ার ছোট ছেলের স্ত্রী রশিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী থাকেন সিলেটে। শ্বাশুরিসহ দুই বাচ্চা নিয়ে আমি বাড়িতে থাকে। লাশ আমি দেখিনি। শুনেছি রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁদাপানিতে ছিল লাশটি। লাশের পেছনে কোমরের উপরে ও পিঠে অনেক গুলো গাইয়ের (বল্লম অথবা অন্য কোন দেশীয় অস্ত্রের আঘাত) চিহ্ন আছে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ওই গ্রামে একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। বৃদ্ধার ছেলে আলতাফ হোসেন ও মন্নান ওই হত্যার মামলার আসামী হয়ে প্রায় দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছেন। আলতাফ সিলেটে থেকে রিক্সা চালিয়ে জীবন-যাপন করছে। আলতাফের স্ত্রী রশিদা বেগম ২ ছেলে ও শ্বাশুরিকে নিয়ে বিশুতারা গ্রামে বসবাস করতেন। রোকেয়ার আরেক পুত্রবধূ তাকমিনা বেগম বলেন, আমার শ্বাশুরির কোন শত্রƒ নেই। সম্পদও নেই। উনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরূতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটা হত্যাকান্ড। উনাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, খুব বড় নয় ছোট কোন কারণে কাছের লোকজনই উনাকে হত্যা করে থাকতে পারে। এই হত্যাকান্ডের পেছনে পরকিয়ার ঘটনা কাজ করে থাকতে পারে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, লাশের গায়ের আঘাতের ধরণ বলছে এটা পরিস্কার পরিকল্পিত একটা হত্যাকান্ড। বিষয়টিকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। বৃদ্ধা খুনের কারণ ও খুনের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করতে পুলিশ মাঠে কাজ করছেন।