ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ৫৯ টি পরিবারের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মাটির নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫৫০ ফুট পাইপ। সংযোগে জালিয়াতির দায়ে এক গ্রাহককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলার সরাইল সদর ইউনিয়নের হালয়াপাড়া, দক্ষিণ আরিফাইল এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন সুলতানার নেতৃত্বে জেলা ও সরাইল থানা পুলিশের সহায়তায় এই অভিযান পরিচালনা করেছেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, ইউএনও’র দফতর ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সরাইল সদরে দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার গ্রাহক সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর লাইন থেকে সংযোগ দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করে চলেছে। মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে এই অবৈধ সংযোগ গুলো প্রদান করছেন এক শ্রেণির ঠিকাদার। অবৈধ সংযোগ দেয়ার কাজে সহযোগিতা করে আসছেন স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক/প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও কথিত গণমাধ্যম কর্মী। অবৈধ সংযোগের চাপে বৈধ গ্রাহকদের লাইনে সমস্যা হচ্ছে গত ২/৩ বছর ধরে। নিজসরাইল এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ সংযোগের মধ্যে ২-৩টি বহুতল ভবনের সংযোগ গুলো উল্লেহযোগ্য। কারণ ওই ভবন গুলোতে রাতের অন্ধকারে সংযোগ দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তৎকালীন ইউএনও কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন ভবন মালিক টাকার বিনিময়ে কতিপয় গণমাধ্যম কর্মীসহ বিভিন্ন জায়গা ম্যানেজ করে ৬ মাস পর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ওই সংযোগ দিয়ে আজও ব্যবহার করছেন। গোপনে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছিলেন কয়েক মাস আগে। তারা বলেছিলেন সরাইলে অবৈধ গ্রাহকদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা চরম দূর্ভোগে আছেন। তাদের রিকুজিশন ও পত্রের ভিত্তিতেই গতকাল বুধবার দুপুরে সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন সুলতানার নেতৃত্বে সরাইল সদরের হালুয়াপাড়া ও দক্ষিণ আরিফাইল এলাকায় অভিযানে নামেন বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাদের সাথে ছিলেন জেলা ও সরাইল থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। অভিযানকালে তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারী ৫৯টি পরিবারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। অবৈধ সংযোগে ব্যবহার করা ১৫৫০ ফুট পাইপ উদ্ধার করেছেন। উত্তর হাবলি পাড়ার নুর আলম নামের এক ব্যক্তি আবাসিক সংযোগ নিয়ে তথ্য গোপন করে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছেন। এই জালিয়াতি হাতেনাতে ধরা পড়লে ভ্রাম্যমান আদালত তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাছরিন সুলতানা উচ্ছেদ/বিচ্ছিন্নের অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ৫৯টি পরিবার সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে সংযোগ দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করে আসছিলেন। জাতীয় সম্পদ ব্যবহারে এমন অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। তিতাস বা বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রক্রিয়ায় চাইলেই আমরা অভিযান করে থাকি। প্রসঙ্গত: বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মো. শাহ আলম বলেছিলেন,সরাইলে গ্যাস সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে অগণিত অবৈধ সংযোগ। এই অবৈধ সংযোগের অনিয়মের সাথে ঠিকাদার ও গ্রাহক জড়িত। আমরা তালিকা করেছি। শতশত মামলা দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে লাইন কেটে দিচ্ছে। আমরা রেগুলেটর উদ্ধার করে নিয়ে আসি। চুরেরা আবার রেগুলেটর ক্রয় করে নিয়ে আসে।