খুলনার পাইকগাছায় এলাকাবাসী জনস্বার্থে অবিলম্বে জনগুরুত্বপূর্ণ গয়সা খাল ও পোদা নদী দখল মুক্ত করে জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবী জানান। প্রায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটির ৪ কি.মি. খনন করা হলেও অবশিষ্ঠ ৩ কি.মি. খনন না করায় খালের পুরোপুরি সুফল সাধারন মানুষ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গয়সা খাল ও পোদা নদী খনন এবং অবৈধ দখল মুক্ত করার দাবীতে ৫ মার্চ বিকালে লতা ইউনিয়নের ওয়াজেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে গয়সা খালের পাড়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। সাবেক ইউপি সদস্য ও সাংবাদিক কৃষ্ণ রায়ের সভাপতিত্বে ও পল্লী চিকিৎসক নিউটন মিস্ত্রীর সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. এফএমএ রাজ্জাক, উপাধ্যক্ষ ত্রীদিব কুমার মন্ডল, আ.লীগনেতা সোহরাব হাওলাদার, শেখ আলাউদ্দীন, অধ্যাপক রেজাউল করিম, প্রভাষক কামাল হোসেন, প্রধান শিক্ষক গোপাল বিশ^াস, সাবেক প্রধান শিক্ষক সূর্য কান্ত সরকার, যুবলীগনেতা অহেদুজ্জামান মোড়ল, বাবু লাল বিশ^াস, জগদীশ দে, মানিক ভদ্র, জয়ন্তী মন্ডল, শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, মিল্টন বিশ^াস, সাবেক ইউপি সদস্য কালী দাশ মন্ডল, যুব নেতা মানষ মন্ডল, কুমারেশ সরকার, প্রেমাংশু সরকার, সুচিত্রা সরকার ও সুশান্ত দফাদার প্রমুখ। বক্তারা মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলেন, লতা ইউনিয়নের গঙ্গারকোনা পিচের রাস্তা থেকে ধলাই স্লুইচ গেট পর্যন্ত গয়সা খাল ও পোদা নদী। যার মধ্যে গয়সা খাল ১৯ এবং পোদা নদী ৫৫ একর সহ মোট ৭৪ একর। খালটি এলাকার পানি সরবরাহ এবং ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। খালটি এলাকার সন্তোষ ও ইকবাল গাজী বাঁধ এবং নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি খালটি খননের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে বলে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা অভিযোগ করেন। বক্তারা জনস্বার্থে অবিলম্বে জনগুরুত্বপূর্ণ গয়সা খাল ও পোদা নদী দখল মুক্ত করে জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবী জানান। ইজারা গ্রহীতাদের বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল নেই। নদী ও খানে বাাঁধ ও ঘন নেট পাটা দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। খালটি সম্পূর্ণ খনন না করায় খননকৃত অংশের কোন সুফল কাজে আসছেনা বলে জানিয়েছেন ইজারাদার সোনার তরী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য, উপজেলার নদী এবং খাল বেষ্টিত ইউনিয়নগুলোর মধ্যে লতা ইউনিয়ন অন্যতম। এ ইউনিয়নে অনেকগুলো নদ-নদী ও অসংখ্য সরকারি খাল থাকায় এ ইউনিয়নে তেমন কোন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না। এ ইউনিয়নের অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারি খাল ও বদ্ধনদী হচ্ছে গয়সা খাল ও পোদা নদী। এ খালটির আয়তন প্রায় ৭৪ একর। দুটি ভাগে এটি ইজারা প্রদান করা হয়। গয়সা খালের অংশটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে এবং বদ্ধ পোদা নদীর অংশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৩ বছর মেয়াদী ইজারা প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় সোনার তরী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুকূলে ইজারা গ্রহণ করেছে সমিতির নেতৃবৃন্দ। ইজারা চুক্তি অনুযায়ী এখনো গয়সা খালের মেয়াদ ২ বছর ও পোদা নদীর মেয়াদ ১ বছর রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে খালের গঙ্গারকোনা পিচের রাস্তা থেকে আঁধারমানিক ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন জটিলতার কারণে খালের অবশিষ্ট ৩ কিলোমিটার খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে খননের পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না এলাকার মানুষ। এ ব্যাপারে সোনারতরী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ইকবাল হোসেন জানান, খালটি ইজারা প্রদান করায় আমরা প্রতিবছর সরকারকে ২ লাখ টাকা রাজস্ব এবং এর সাথে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ সরকারি খাতে প্রদান করে থাকি। সন্তোষ কুমার জানান, আমরা খালের কোথাও বাঁধ কিংবা পাটা দেয়নি। ইজারা চুক্তিতে পাটা দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা খালে জাল ব্যবহার করে থাকি। এর ফলে খালের কোথাও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ হয় না। কিছু কিছু জায়গায় ছোট খাটো বাঁধ থাকলেও সেটি পূর্বের ইজারাদারের দেওয়া। ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ^াস জানান, খালের পুরোপুরি সুফল পেতে হলে খালটি সম্পূর্ণ খনন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন জানান, সরকারি জলমহল নীতিমালা অনুসরণ করেই খালটি ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এটি ইজারা প্রদান করা হলেও জনস্বার্থ বিঘ্নিত বা ব্যাহত যাতে না হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে খালের অবশিষ্ট অংশ খননের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।