সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলায় ভেজাল পণ্যে সয়লাব। শাঁখা, সিঁদুর, চন্দন কাঠ ও কাঠের গুড়া, পিতলের বাসন-কোসন থেকে শুরু করে দুধের মধ্যেও ভেজাল করা হচ্ছে। স্রাইন কমিটি এ মেলায় ভেজাল ও নকল পণ্য বিক্রির উপর কঠোর নজরদারি করছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক সিঁদুর। সেই সিঁদুরও মেলার প্রায় প্রতিটি দোকানে সয়লাব হয়ে গেছে। মেলায় সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি স্রাইন কমিটি ও মেলা কমিটি সহ প্রশাসন মেলায় ভেজাল ও নকল পণ্য বিক্রির উপর কঠোর নজরদারি করছেন। জানা যায় , এশিয়া মহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎতম শিব চতুর্দশী ৭ মার্চ থেকে তিন দিনব্যাপী এই মেলা চলবে। শুরু হওয়ার পর ক্রমে বাড়ছে পুন্যার্থীর ভিড়। ধারণা করা হচ্ছে আগামী শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের এ মেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে। প্রতিবছর এই মেলায় ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সাধু-সন্যাসী ও লাখ লাখ পুন্যার্থীদের পদভারে মুখরিত থাকে সীতাকুণ্ডের তীর্থভূমি চন্দ্রনাথ ধাম। শিব চতুর্দশী মেলার প্রথম দিন স্রাইন কমিটির সদস্য ও সনাতন ফিলোসোফি এন্ড স্ক্রিপচার (এসপিএস) এর প্রধান সমন্বয়ক জুয়েল শর্মা ও সাধারন সম্পাদক শাওন চৌধুরী বলেন, ভেজাল ও নকল পন্যের ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করলে সাথে সাথে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। গত বৃহস্পতিবার ৭ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় নিউ মহাতীর্থ সিঁদুর নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নকল সিঁদুর বিক্রি করছে এই মর্মে রাজা মহাতীর্থ সিঁদুর নামের সিঁদুর অসাধু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখি নকল রাজা মহাতীর্থ সিঁদুরের প্যাকেটসহ প্রায় প্রতিটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে । বিক্রেতারা নকল সিঁদুর বিক্রয়ের বিষয়টি আমাদের কাছে স্বীকার করেন। এসময় তাদের পণ্যের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেখাতে ব্যার্থ হয়। আমরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারীতে আনবো। যাতে দ্রুত নকল পণ্যগুলো মেলা থেকে তুলে নেওয়া হয়। রাজধানী ঢাকার রজনী বোস লেন থেকে আসা শ্যামল মন্ডল বলেন, মেসার্স এস.এম এন্ড কোং নামে একটি সিন্দুর তৈরি প্রতিষ্ঠান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তিৃক ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। যার নম্বর ২৪১৫৭০/২০১৯. নিউ মহাতীর্থ সিন্দুর ব্র্যান্ড নামে শিল্প মন্ত্রনালয় এর অধীনে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর কর্তিৃক সিন্দুরের মোড়কের অধিকার লাভ করে। যার নম্বর ২৩৯৩৩০ এবং দপ্তর কর্তিৃক প্রাপ্ত সিন্দুরের মোড়কের ডিজাইন রেজিস্ট্রেশন সনদ নম্বর ০২১৯৯১। উৎপাদিত সিন্দুর উৎকৃষ্ট মানের কারনে অল্প দিনেই বাজারে সুপরিচিতি লাভ করে। মোড়কের নির্দিষ্ট রং, ডিজাইন, মান, গেটআপসহ রেজিস্ট্রি প্রাপ্ত হয় ‘নিউ মহাতীর্থ সিন্দুর। এই নিউ মহাতীর্থ সিন্দুরের মোড়ক (প্যাকেট) নকল করে মেলায় রাজা মহাতীর্থ সিন্দুর ও রবীন্দ্রতীর্থ সিন্দুর বিক্রি করছে । একটি অসাধু চক্র প্রায় ৮ লাখ টাকার নকল সিন্দুর সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলায় হাজার হাজার দোকানে ছড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে ভেজাল ও নকল এই সিন্দুর বেশি মূল্যে বিক্রি করে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা ও তাদের ঠকাচ্ছে। অপরদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। সচেতন মহল এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান ।