রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ‘কোনো হাসপাতাল তাদের পূর্বশর্ত ছাড়া কোনোভাবেই চলতে পারবে না। একটা অপারেশন করতে যা যা দরকার সেটা ছাড়া কোনোদিনই কোনো হাসপাতালকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। আর সেখানে অপারেশন করতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই দায়-দায়িত্ব ওই হাসপাতাল এবং চিকিৎসককেই নিতে হবে।’ সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘অভিযান কথাটা একটু অন্যরকম শোনায়। কারণ, অভিযান তো হয় চোর ধরতে গেলে, জঙ্গি ধরতে গেলে। আর হাসপাতাল পরিদর্শন তো একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। এর আগে মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সভাকক্ষে রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের (রামেবি) ভাইস চ্যান্সেলর, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজের পরিচালক, অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানগণের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি রামেক হাসপাতালের আইসিইউ কমপ্লেক্সেরও উদ্বোধন করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী আরো বলেন, রাজশাহী মেডিকের কলেজে একটিসহ সারাদেশে মোট ৫টি বার্ন ইউনিট চালু করা হবে। এ ইউনিটগুলো চালু হলে জনগণের বেশ উপকার হবে বলে আশা করছি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি অন্যান্যগুলোর চেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মন্তব্য করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এসময় অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সেবা নিতে আসা রোগীদেরকে ফ্লোরে থেকে সেবা নিতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা এক বারে সমাধান করা সম্ভব না। যতক্ষণ না আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে পারছি, ততক্ষণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কমবে না। তবে আমরা দেশের চিকিৎসাসেবা শতভাগ উন্নত করতে না পারলেও কিছুটা উন্নত করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, রাজশাহীতে একটি জেলা হাসপাতাল আছে, সেটা খালি পড়ে থাকে। আমরা চেষ্টা করবÑ এটাকে সচল করার। তা হলে হয়তো-বা কিছুটা হলেও এই হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। এ সময় হাসপাতালগুলোতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনবলের ঘাটতি নিয়েও আমরা কাজ করছি। তবে খুব তাড়াতাড়ি জনবল সংকটের সমাধান হবে বলে আশা করছি। ‘চিকিৎসকের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও অনেক চিকিৎসককে ওএসডি করে রাখা হয়েছে, এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কী?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হবে, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। মতবিনিময় সভায় রামেবি’র ভাইস চ্যান্সেলর, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজের পরিচালক, অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নানা সমস্যা তুলে ধরেন। মন্ত্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং তা পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ^াস দেন। মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে মোট ৪ হাজার ৪৭৫ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। আর প্রতিদিন গড়ে অপারেশন করা হয় ১৩৮ জন রোগীর। আজ (সোমবার) নতুন একটি আইসিইউ খোলার মধ্যদিয়ে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবায় এ হাসপাতালে আরও একটি মাত্রা যোগ হলো। মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, রাজশাহী সদর আসনের এমপি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদসহ রাজশাহী বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।