অভাবের সংসার। স্বামী মারা গেছে কয়েকদিন হলো। ছোট ছোট দুটি ছেলে মেয়ে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তির মৃত্যুতে তার সংসারে নেমে এলো অন্ধকার। ছোট ছোট দুটি বাচ্চাকে নিয়ে তিনি কীভাবে বেঁচে থাকবেন! স্থানীয় এলাকাবাসী আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পাশে ছোট একটি দোকানে তিনি চা-পান বিক্রি শুরু করলেন। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়েই কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করলেন তিনি। এভাবে শুরু হলো তার সংগ্রামী জীবন। বলছি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের সংগ্রামী নারী শান্তা রানী দত্তের কথা। বর্তমানে তার সংসার চলছে ছোট একটি দোকানে চা-পান আর চকলেট বিক্রি করে। মুক্তা রানী দত্ত এবার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আর ছেলে মবিন গোপাল দত্ত পড়ছেন প্রথম শ্রেণিতে। দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে চলছে ছেলে মেয়ের পড়াশোনাও। প্রতিদিন ভোরে দোকান খুলে বসেন শান্তা রানী দত্ত, হাজী আফতাব স্কুলের ছেলে মেয়েরা চকলেট, সিংগারা, সমুচা ও এলাকাবাসীরা কাছে চা পান খেতে আসেন তার দোকানে। এতে দিন শেষে তার দুই থেকে তিনশত টাকা আয় হয়। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) কথা হয় শান্তা রানী দত্তের সাথে। তিনি তুলে ধরতে লাগলেন তার সংগ্রামী জীবনের গল্প। মুক্তা রানী দত্ত বলেন, তার দোকানে চা-পানের পাশাপাশি বিস্কুট, ভাজা-পোড়া খাবার, পাউরুটিসহ বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী তার দোকানে খাবার খেতে আসে। তিনি জানান, ২০২২ সালের ৮ ই মার্চ তার তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। সংসার চালানোর মতো কোনো পথ ছিলো না। সংসারে ছিলো ছোট দুইটি ছেলে মেয়ে। তার সংসারের এ অবস্থা দেখে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। ছোট একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দেন তাকে। তিনি শুরু করেন নতুন জীবন, গত দু বছর ধরে এ দোকান থেকেই তার সংসার এবং ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চলছে বলেও জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা তারেক নেওয়াজ বলেন, দু বছর আগে শান্তা রানী দত্তের স্বামী মারা যান। এর পর থেকে তিনি এ দোকান চালান। বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা তার দোকান থেকে কিনে টিফিন খায়। আমরাও চা-পান খেতে আসি তার দোকানে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সিদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ কামরুজ্জামান কাঞ্চন জানান, শান্তা রানী দত্ত সংগ্রামী নারীদের উদাহরণ হতে পারে। কীভাবে পৃথিবীতে অভাবের মধ্যেও ঘুরে দাড়াঁনো যায় শান্তা রানী তার প্রমাণ। অন্য মহিলারা যখন সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে শান্তা রানি দত্তের চিন্তা ভাবনা তখন দোকানে বিকিকিনি নিয়ে।