বাঙালির ইফতার মানেই বাহারি রকম ও স্বাদের বিভিন্ন খাবার। ইফতারি প্লেটে চাই খেজুরসহ বিভিন্ন ফল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য। শেরপুর জেলায় এমনই একটি মিষ্টি খাদ্য রয়েছে যা কিনা ইফতারে থাকতেই হবে। সেটি হল মাসকলাই ডালের তৈরি জিলাপি বা আমৃত্তি। মাসকলাই ডালের এই মচমচে রসালো জিলাপি ইফতারের প্লেটে অন্য সকল মিষ্টিকে ছাড়িয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, জেলা শহরের মিষ্টি ব্যবসার মূল কেন্দ্র গোয়ালপট্টির প্রায় ১০-১২ টি মিষ্টির দোকানে মাসকলাই ডালের জিলাপি তৈরি করা হয়। কেউ আবার এই মাসকলাইয়ের জিলাপিকে আমৃত্তি বলে। রোজা শুরু হলেই শেরপুর শহরের গোয়াল পট্রির মিষ্টির দোকানগুলোতে মাসকলাইয়ের জিলাপির কদর বাড়ে। তবে এ মাসকলাইয়ের জিলাপি কেবলমাত্র রমজান এবং হিন্দুধর্মীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বানানো হয়। এছাড়া বছর জুড়ে কোনো দোকানেই ওই মাসকলাই জিলাপি পাওয়া যায় না। এই জিলিপি বানানোর আগে মাসকালাই ডাল ভালোভাবে ধুয়ে তা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় কিছুক্ষণ। এরপর হাতে শীল-পাটায় অথবা মেশিনের সাহায্যে ওই ডাল পিষিয়ে নরম করা হয়। পরবর্তীতে ওই ডালের সঙ্গে সামান্য কিছু চালের গুড়া বা বেসন দিয়ে জিলিপি তৈরির মূল উপাদান তৈরি করা হয়। এরপর কাপড়ের মধ্যে রেখে তা চেপে ধরে গরম তেলের মধ্যে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই তেল থেকে জিলিপিগুলো তুলে চিনির রসের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে তুলে ফেলা হয়। এরপর এ জিলাপি বিক্রি করা হয়। জিলাপি কিনতে আসা রিয়াদ ও আবরার বলেন, এই মচমচে রসালো জিলাপি ইফতারে প্রশান্তি দেয়। শহরের গোয়ালপট্টিতে দুপুরের পর থেকে এই জিলাপি তৈরি শুরু হয়। এ সময় জিলাপি তৈরির দৃশ্য ও সুগন্ধে ভিন্ন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বেলা যতই পড়তে থাকে দোকানগুলোতে মাসকলাইয়ের জিলাপির ক্রেতার ভিড় ততই বাড়ে। গরম গরম এই জিলাপি খুব মজাদার ঠান্ডা হলে স্বাদ তেমন থাকে না। তাই বিকালের দিকে ক্রেতারা গরম জিলাপি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রোজাদারদের পছন্দের তালিকায় থাকে এই মাসকলাইয়ের জিলাপি। রমজানের পবিত্রতা ও রোজাদারদের বিবেচনায় বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে কোনোরকম রঙ বা কেমিক্যাল ব্যবহার না করে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ অতি সাবধানতার সঙ্গে এই জিলাপি তৈরি হয়। তাই এর স্বাদ ও চাহিদা যুগ যুগ ধরে একই রকম রয়েছে। ডাল তেল চিনিসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই জিলাপির দামও বেড়েছে। রোজায় প্রতিদিন গোয়ালপট্টি এলাকায় প্রায় ১০ মণ জিলাপি বিক্রি হয়। শেরপুরের এই ঐতিহ্যবাহী মাসকালাই ডালের জিলাপি সুনাম জেলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায় জেলার বাইরে থেকেও অনেকেই এই মাসকলাইয়ের জিলাপি নিতে আসেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন ইফতার মাহফিলেও এই জিলাপির বিকল্প নেই। নন্দ গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী ভোলানাথ ঘোষ জানান, শেরপুরে জমিদারি প্রথা শুরু থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে মিষ্টি তৈরির প্রচলন শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই নানা মিষ্টির পাশাপাশি এই মাসকলাইয়ের জিলাপিও তৈরি করা হতো। সেই থেকে আজও প্রতিবছর রোজার মধ্যে এই মাসকলাইয়ের জিলাপি বিক্রি করা হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দাম প্রতিবছরই কিছু কিছু বাড়লেও জিলাপির গুণগতমান একই রয়েছে।