মেহেরপুরের গাংনী পৌর শহরের চৌগাছার আনোয়ার হোসেন দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। একটি গাংনী সরকারী ডিগ্রি কলেজের এমএলএসএস (পিওন) ও অপরটি গাংনীর এমপিওভূক্ত মানিকদিয়া, ভোলাডাঙ্গা, কেশবনগর (এম.বি.কে.) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সংশ্লিষ্টদের চোখে ধুলো দিয়ে প্রায় ২০ বছর চাককুরী করছেন। বিধি বর্হিভূতভাবে দুটি পদে চাকুরী করলেও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এম.বি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এম.বি.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিও ভুক্ত হয় ২০২৩ সালে। এমপিও ভূক্তির পর ব্যাক ডেট দিয়ে কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার গোপনে ম্যানিজিং কমিটি গঠন সহ নানা অভিযোগে অভিভাবকরা সংবাদ সম্মেলন সহ ইউএনও বরাবরে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছে। তবে প্রধান শিক্ষক অন্যদের এমপিও শিটে নাম উঠিয়ে দিলেও নিজের এমপিওর কাগজপত্র পাঠাননি। তিনি সরকারী কলেজ থেকে বেতন নিচ্ছেন। আনোয়ার হোসেন স্কুল থেকে সরকারী বেতন না নিলেও প্রধান শিক্ষকের পদ তো ছাড়েননি। বেতন না নিলেও নিযোগ বাণিজ্য সহ অনান্য সুবিধা ঠিকই নিয়ে থাকেন। আমরা এর বিচার চাই। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি খুব খারাপ। নানা দিকের নানা চাপাচাপি, অভিভাবকদের অসন্তোষ এসব কারনে আমি কোন কাজ করতে পারিনা। তাই বিদ্যালয়ে আর যায়না। কেশবনগর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, নিয়োগ বাণিজ্য সহ অবৈধ্য নানা সুবধিা পেতে সে প্রধান শিক্ষকের পদটি ধরে রেখেছে। এছাড়া সকলের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে আনোয়ার হোসেন দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে না আসার কারনে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। সেই প্রধান শিক্ষকই বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় এখন অভিভাবকহীন অবস্থায় কোন রকমে চলছে একেবারে না চলার মত করে ওই প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়টিতে খাতা কলমে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও এদের উপস্থিতি ৫০ জনের কম দেখা যায়। পড়াশোনার পরিবেশ নেই বললেই চলে। এমপিও ভূক্তির পূর্বে টিনশেড নির্মিত কয়েকটি ক্লাসরুম আছে। জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সরকার থেকে নতুন নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলেও প্রধান শিক্ষকের গাফলিতিতে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বঞ্চিত। এই অচল অবস্থা দিনের পর দিন চলতে চলতে হঠাৎ শিক্ষার্থীদের অভিবাবকরা প্রতিবাদি হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থী অভিভাবক আজিবর হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না আসায় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এমপিও হলে সে পিওনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়মিত হবে। তবে ২০২৩ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও হলেও নিজের এমপিও ছাড় না নিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ ধরে রেখেছে। ধরে রাখার কারণ বিদ্যালয় থেকে অবৈধ্য সুবিধা নেওয়া। সে নিয়মিত কলেজে যাই অথচ স্কুলে আসেনা। কিভাবে এই বিদ্যালয়ের পড়াশুনা হবে? আমরা এর সুরাহা চাই। প্রধান শিক্ষকের ভয়ে নাম প্রকাশ না শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না আসায় ঠিকমত ক্লাস হয়না। কখন, কবে স্কুল বসবে ছুটি হবে তাও ঠিকমত কেউ বলতে পারেনা। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। এম.বি.কে. বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতায় ২ মাস স্বাক্ষর নেই। প্রধান শিক্ষক যদি বিদ্যালয়ে না আসে সেই বিদ্যালয়ের কি অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমরা রুটিং ওয়ার্ক করে যাচ্ছি। আমাদের দায়ীত্ব আমরা পালন করে যাচ্ছি। তবে প্রধান শিক্ষকের কোন সিধান্ত আমরা তো নিতে পারিনা। অপর সহাকারী শিক্ষক হুমায়ন কবির বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়মিত না আশায় পড়াশুনা সহ দাপ্তরিক কাজে ঝামেলা হয়। আর প্রধান শিক্ষক দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে এটা ওপেন সকলেই জানে। এখানে আমাদের কিছু করনীয় নেই। এম.বি.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি বেতন নেন আমি সরকারী কলেজ থেকে। বিষয়টি সরকারের উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত পৌঁচেছে। এখন দেখা যাক কি হয়। তবে বিদ্যালয় থেকে অবৈধ্য সুবিধা নেবার কথা অস্বীকার করেন তিনি। গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো ঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আনোয়ার হোসেন আমার কলেজে পিয়ন পদে চাকুরী করে বেতন নেয়। তবে শুনেছি কোন একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরী করে সে। কিভাবে করে জানিনা। গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজে নিয়মিত হাজিরা দেয় মোঃ আনোয়ার হোসেন। মেহেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্বাস উদ্দিন বলেন, ওই শিক্ষকের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিতম সাহা একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার (১২ মার্চ) গাংনীর এসিল্যান্ড নাদির হোসেনকে তদন্ত কমিটির প্রধান। ও গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবারক হোসেন এবং একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সদস্য করে তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবার জন্য বলা হয়েছে। সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।