আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তাঁর মৃত্যুর খবরে হঠাৎ করেই যেন স্তম্ভিত হয়ে গেছে রাজশাহী তথা দেশবাসী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে সরকার দলীয় রাজশাহীর একাধিক সাংসদ, সিটি করপোরেশনের মেয়র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোকবার্তা জানানো হয়েছে। জানা গেছে, তিনি ১৯৩১ সালের ২৮ অগাস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের (তৎকালীন মালদহ জেলা, ব্রিটিশ ভারত) শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আফতাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। পরিবারের সদস্যদের ৯ ভাই-বোনের মধ্যে টিপু ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি কালিয়াচর বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক ও রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। একই কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। পরে ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ১৯৫৮ সালে গোলাম আরিফ টিপু আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি একাধিকবার রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলন মূলত গোলাম আরিফ টিপু’র নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়াও গোলাম আরিফ টিপু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের উদ্দেশ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। দেশবরেণ্য এই ভাষা সৈনিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, পবা-মোহনপুর আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি বলেন, গোলাম আরিফ টিপু একজন ভাষা সৈনিক ও প্রবীণ আইনজীবী। ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে যথাযথভাবে দায়িত্বপালন করেছেন। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের তাঁর অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবে। গুণি এই মানুষটিকে হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ। তাঁর এই মহাপ্রয়াণে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ভাষা আন্দোলনসহ দেশ মাতৃকার জন্য তাঁর যে অবদান তা জাতি শ্রদ্ধাভরে চিরকাল স্মরণ করবে।