পবিত্র রমজান মাসের ইফতারির প্রধান অনুষঙ্গ খেজুর। যার পুরোটাই আমদানি করতে হয়। কিন্তু এবার খেজুর বাজারে যেন আগুন লেগেছে। মূল্য বৃদ্ধির তাপে যেন ভোক্তাদের হাত পুড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া খেজুরের জাতের একটি হলো ইরাকের জাইদি খেজুর। দেশের আমদানি-কারকরা এবার প্রতি কেজি জাইদি খেজুর জাহাজ ভাড়া সহ আমদানি করেছেন ৯৬ টাকার আশেপাশে। বাজারে সেই খেজুর বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ বেশি দামে। সম্প্রতি সরকার রোজা উপলক্ষে ১০% আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। এতে কেজি প্রতি দর ১৩ থেকে ৩৩ টাকা কমার কথা। কিন্তু কমেনি। আসলে সরকারের কারণে যে ব্যবসায়ীরা খেজুর কম দামে দিতে পারছেন না তা না ভেবে সরকার খেজুরের দাম বেঁধে দিচ্ছে। গত ১২ মার্চ খেজুরের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং জাইদি খেজুর এর দাম কেজি প্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বাজারে এর চেয়ে অনেক বেশি দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। অতি নিম্নমানের খেজুরও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার উপরে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ২০২২ সালে খেজুর সহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ককর বাড়িয়ে দেয়। খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক করছিল। মোট কর ভার প্রায় ৫৯ শতাংশ আমদানি কারকদের ব্যয় ও বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায় ইরাক থেকে আমদানিতে জাহাজ ভাড়া সহ এক মেট্রিক ১০০০ কেজি জাইদি খেজুরের প্যাকেট-জাত দাম গড়েছে ৮০০ মার্কিন ডলার (ডলার প্রতি ১২০ টাকা ধরে কেজি প্রতি ৯৬ টাকা) এই খেজুরের দাম প্রতি কেজি আড়াই ডলার ধরে শুল্ক আদায়েত নির্দিষ্ট মূল্য) শুল্ককর আদায় করছে জাতীয় বাজস্ত বোর্ড। ফলে শুল্ককর পড়ছে কেজিতে প্রায় ১৩০ টাকা। এই হিসাবে জাইদি খেজুরের আমদানিতে কেজি প্রতি আনুষ্ঠানিক ব্যয় দাড়াচ্ছে ২২৬ টাকা। এরপর পরিবহন, ব্যাংক ঋণের সুদসহ আনুষাঙ্গিক খরচ যোগ করার পর এক কেজি খেজুরের ব্যয় হয় ২৪০ টাকার মত। সাথে খেজুর আমদানি কারক থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে খুচরা এভাবে কয়েক দফা হাত বদলে দাম বেড়ে যাচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা আর এ বাড়তি টাকা যাচ্ছে ভোক্তার পকেট থেকে। এমনি বাজারে নিত্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেই সাথে ধর্মীয় আচার পালনে খেজুরের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ দিশেহারা। মানুষের খেজুর প্রীতি বাদ দিয়ে বড়ই দিয়ে ইফতারি করার উপদেশ দিয়ে রসিকতাও করেছেন একজন মন্ত্রী। সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা অনেক গাল ভরা বক্তব্য দিয়েছেন, রোজায় নিত্যপন্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কিন্তু বাস্তবে রোজায় সব নিত্যপন্যের দামই বেড়েছে। সরকার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হিমায়িত মাছ, মাংস, ডিম, দুধ বিক্রির উদ্যোগ নিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের গালভরা বক্তব্য নয়, আমরা চাই বাজার নিয়ন্ত্রণের বাস্তব ফলাফল।