জেলার হিজলা উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী বাদী হয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। অপরদিকে চাঁদার দাবিতে উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম সাতলা গ্রামের একটি মাছের ঘেরে তান্ডব চালিয়ে ছয়টি পানি সেচ পাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে হিজলা থানার ওসি (তদন্ত) দীপংকর রায় জানান, হত্যা মামলায় হিজলা উপজেলার ধূলখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ঢালীসহ নামধারী ৪৯ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী আখিনুর বেগম ধূলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নিহত জামাল মাঝির স্ত্রী। জামাল মাঝির রক্তাক্ত লাশ গত ১৬ মার্চ সকালে পালপাড়া গ্রামের মেঘনা নদীর তীরের সয়াবিন ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়।
মামলার বরাতে ওসি (তদন্ত) জানান, আখিনুর বেগমের স্বামী জামাল মাঝি ধূলখোলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তার স্বামী জামাল মাঝি স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের অনুসারী। আসামিরা সংরক্ষিত আসনের এমপি শাম্মি আহমেদের ঘনিষ্ঠজন। তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জামাল মাঝির বিরোধ ছিল। বিরোধের জেরে কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে অগ্নিসংযোগ করে জামাল মাঝির বসত ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও সবাইকে মারধর করে। এ ঘটনায় মামলা করে জামাল মাঝি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জামাল মাঝিকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
অপরদিকে একইদিন (বুধবার) দুপুরে উজিরপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্থ মাছের ঘের ব্যবসায়ী ইদ্রিস হাওলাদার বাদি হয়ে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার, তার ঘনিষ্ট সহযোগী আসাদ হাওলাদারসহ ১২ জনের নামোল্লেকসহ আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এজাহারে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ হাওলাদারের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল গত ১৬ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ইদ্রিস হাওলাদারের মাছের ঘের ও মুরগির খামারে দেশিয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। এ সময় ছয়টি পানির সেচ পাম্পে অগ্নিসংযোগ করে পুড়ে ফেলা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাজিব মোল্লা আসামিদের বাঁধা দেওয়ায় তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে রাজিবের ডাক চিৎকারে স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা একটি মাইক্রোবাস ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারভূক্ত আসামি কিবরিয়া হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
মামলার বাদি ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি আসাদ হাওলাদার দীর্ঘদিন থেকে তার কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়া নারকীয় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে আমার প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।