নড়াইলের লোহাগড়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ির প্রায় ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে মোঃ মকিদুল(২৮) নামে এক প্রতারক। এলাকা থেকে পালানোর পর থেকে প্রতারক ওই ব্যবসায়ির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে ঝুঁলছে তালা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন প্রতারক ব্যবসায়ির বন্ধু মহম্মদপুর থানার রোনগর গ্রামের বাসিন্দা মুদি ও বিকাশ ব্যবসায়ি মোঃ মেহেদি হাসান। তারই খোয়া গেছে প্রায় ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দিশেহারা হয়ে এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে ক্ষতিগ্রস্থ মেহেদি হাসানের পিতা নাহিদুজ্জহামান নড়াইল পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগ, এলাকাবাসী ও লোহাগড়ার লাহুড়িয়া কালিগঞ্জ বাজারের বেশ কয়জন ব্যবসায়ির সাথে কথা বলে জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া জমাদ্দারপাড়ার(হিন্দু পাড়া) মোঃ ছানোয়ার মোল্যার ছেলে মোঃ মকিদুল ইসলাম। লাহুড়িয়া কালিগঞ্জ বাজারের কাঁচাবাজার পট্টিতে তার গোডাউন আছে। ৬-৭ বছর যাবৎ মুদি দোকানে ভোজ্যতেল, ছোঁলা, খেজুর, চিনি সহ নানা খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতেন। ব্যবসার সুবাদে ওই বাজারসহ আশপাশের বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ির সাথে তার বন্ধুত্ব বা সখ্যতা গড়ে ওঠে। মোঃ মকিদুল সখ্যতা গড়ে ওঠা ৫-৭ জন ব্যবসায়ির কাছ থেকে মাঝে মধ্যে ২-৪ লাখ টাকা ধার নিতেন। আবার ফেরতও দিতেন। ব্যবসার লাভের একটা অংশ সখ্যতা গড়ে ওঠা ব্যবসায়ি বন্ধুদের দিতেন। এভাবে আস্তে আস্তে সবার কাছে বিশ^াসী হয়ে ওঠে মোঃ মকিদুল। প্রতারক মোঃ মকিদুল রোনগর গ্রামের বাসিন্দা মুদি ও বিকাশ ব্যবসায়ি মোঃ মেহেদি হাসান(২৭) এর সাথে বেশি সখ্যতা গড়ে তোলে।
ব্যবসায়ি মোঃ মেহেদি হাসান জানান, আমার সাথে মকিদুল দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা করছিলো। লেনদেন ভালো ছিলো। তাই কখনো সন্দেহ করিনি। আমার সাথে তার ভোজ্যতেল, ছোঁলা, খেজুর, চিনি সহ নানা খাদ্যপণ্য সরবরাহের ব্যবসা ছিলো। ২০২৩ সালের ১৯ জুন থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবসার জন্য ভোজ্য তেল, খেজুরসহ নানা খাদ্যপণ্য কেনবার কথা বলে মোঃ মকিদুল আমার কাছ থেকে নগদে ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নেয়। কয়েকদিন পর টাকা ফেরত চাইলে মোঃ মকিদুল লাভসহ টাকা দেবো দেবো করে কালক্ষেপন করে। এরপর হঠাৎ এলাকা থেকে প্রতারক মোঃ মকিদুল এলাকা থেকে উধাও হয়ে যায়। উপায়ন্ত না পেয়ে বিষয়টি মোঃ মকিদুলের বাবা-মাকে জানালে তারা টাকা ফেরত দিতে সম্মত হন। পরবর্তীতে তারা আবার অস্বীকার করেন।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ি মোঃ মেহেদি হাসান এর পিতা মোঃ নাহিদুজ্জামান জানান, আমার ছেলে তার কাকা, খালুসহ আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ও বেসরকারি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করতো। এখন আত্মীয় ও দেনাদাররা টাকা ফেরতের জন্য মেহেদিকে চাঁপ দিচ্ছে। অন্যদিকে মকিদুল প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। মানুসিক চাপে আমার ছেলের জীবন এখন অনিশ্চয়তায়। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়িসহ জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানিয়েও কোন ফল পাইনি। অবশেষে প্রতারক মোঃ মকিদুল(০১৯৯৬-৫২৪৯২৮) ও তার পিতা মোঃ ছানোয়ার মোল্যা(০১৯৬৪-৪৬৯১১৩), মা মোছাঃ পারুল বেগমের নামে নড়াইলের পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ সুপার মহোদয় বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন লাহুড়িয়া পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রের উপর। এস,আই সজিব(০১৬২৭-৯৯৩৭৩৬) বিষয়টি তদন্ত করছেন। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এ বিষয়ে পুলিশের কোন অগ্রগতি নেই।
ক্ষতিগ্রস্থ অন্য ব্যবসায়ি হলেন লাহুড়িয়া কালিগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ি আব্দুর রশিদ মোল্যার ছেলে মোঃ তুহিন। তিনি জানান, আমি মকিদুলের কাছে পাবো ২লাখ ১১ হাজার টাকা। ব্যবসায়ি ইমরান পাবেন ১ লাখ ৬০ হাজার, উথান ৪ লাখ, বাজারের টান সমিতির ৪ লাখ, মফিজারের শালীর টাকা নেছে, মকিদুলের আপন চাচা হাসানের ২৩ হাজার নেছে। ব্যবসায়ি মোঃ তুহিন আরো বলেন, মকিদুল আমাকে বলেছে ব্যবসায়ি মেহেদি ১০ লাখ টাকা পাবে। আর মেহেদি আমাকে জানায়, সে ১২ লাখ টাকা পাবে। এছাড়াও আরো অনেকে টাকা পাবে। প্রায় ২৫ লাখ টাকা নিয়ে মকিদুল উধাও হয়েছে ঢাকায়। ফোন বন্ধ। আমরা এখন ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।
প্রতারক মোঃ মকিদুলের বাড়ি গেলে দেখা যায় দুইটি ঘরই তালাবদ্ধ। এমনকি তার বাবা-মা ও বাড়িতে নাই। ফোনেও তাদের পাওয়া যায়নি। মকিদুলের সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফোন বন্ধ। প্রতারক ব্যবসায়ির প্রতিবেশি আব্দুল আহাদ জানান, শুনেছি বহু লোকের টাকা আত্মসাৎ করে মকিদুল পালিয়েছে। গ্রামের বাড়িতে অনেকদিন আসেনা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস,আই সজিব জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সুপার স্যারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। ব্যবসায়ি মেহেদিসহ অন্যরা আসলেই মকিদুলের কাছে টাকা পাবে। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে মকিদুলের বাবার সাথে বসেছিলাম। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরাও ছিলেন। মকিদুলের বাবা এখন বলছেন, ছেলেকে টাকা দিছেন, তার কাছ থেকে নেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব বিষয়টি জানেন। তার উপরই সব নির্ভর করছে। লাহুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুল ইসলাম(কামরান) বলেন, এ ঘটনা শুনেছি। থানায়ও বসাবসি হয়েছে। এখনো কোন সুরাহা হয়নি। বিষয়টি আমার বাবা(উপজেলা চেয়ারম্যান) দেখছেন।
এ বিষয়ে জানতে লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস,এম এ হান্নান রুনু”র ফোনে (০১৯৩৭-৮৭৮০৭৫) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, পূর্বে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন , বিষয়টি আমি জানি। একাধীকবার বসাবসি হয়েছে। তাদেরকে দেনা পরিশোধ করবার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছি। এখনতো শুনছি অভিযুক্ত মকিদুল পালিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরা টাকা ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চান